বরিশালে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে রয়েছে ধনীর দুলালরা। বলতে গেলে বরিশাল নগরীতে এমন প্রায় ৬০জন উঠতি বয়সী তরুণ ও যুবক ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা ও সরাসরি ব্যবসার সাথে জড়িয়ে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে এমন তথ্য মিলেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে। যে কথা খোদ ইয়াবাসেবীরাও শিকার করেছেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তারা জানিয়েছেন, ইয়াবা এখন বাছাই করা লোকরা বরিশালে এনে ব্যবসা করেন না। ইয়াবার সাথে এমন লোকজন জড়িত রয়েছে যাদের দেখলে কেউই বুঝবে না যে এরা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। দামি মোটরসাইকেল, মোবাইল বা চলাফেরা দেখলে যে কেউ বলবে সব কিছু পরিবারের টাকায় ক্রয় করা। তবে আদৌ বিষয়টি তেমন নয়।
একাধিক ইয়াবাসেবী জানান, এই ধনীর দুলালরা কয়েকদিন পর পরই মোটরসাইকেল ক্রয় করে। বলতে গেলে একটা কিনে আরেকটা বিক্রি করে। এরা নিজেদের স্ব স্ব এলাকায় প্রভাশালীও। জড়িত রয়েছেন নানা ছাত্র সংগঠনের সাথেও। কয়েকজন ইয়াবা সেবীর কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে পাওয়া যায় আরো নানা তথ্য।
উজিরপুরের হারতা এলাকা থেকে বরিশাল নগরীতে ইয়াবা সরবরাহ করে রাসেল মল্লিক নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক। এই তথ্যর ভিত্তিতে রাসেল মল্লিকের খোঁজ করা হয় এবং সেই মোতাবেক তাকে এয়ারপোর্ট থানা এলাকার গড়িয়ারপারে পাওয়া যায়। নানা শর্তের ভিত্তিতে সে ইয়াবা সরবরাহ করার বিষয়টি স্বীকার করে এবং সে এগুলো বিক্রি করেন না বলে জানায়। সরবরাহ করার জন্য তাকে টাকা দেওয়া হয় বিকাশের মাধ্যমে।
তিনি জানান, যাদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করা হয় তারা সকলেই বড়লোকের ছেলে। অনেক টাকা পয়সার মালিক। এদের পুলিশও ধরতে পারে না। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো হওয়ার কারণে পুলিশের সন্দেহের তালিকায়ও নেই তাদের নাম।
রাসেল মল্লিক বলেন, ‘শুধু আমি নই বরিশালে তাদের কাছ ইয়াবা সাপ্লাই করে আরো ৪ জন লোক। যাদের ১ জনের বাড়ি নবগ্রামে, ১ জনের বাড়ি গৌরনদী জেলার টরকী বন্দরে এবং ১ জন ইয়াবা সরবরাহকারীর বাড়ি বরিশাল নগরীতেই। তবে রাসেল বাকি অন্য ব্যক্তির বাড়ির ঠিকানা এবং কারো নামই বলতে পারেননি।
উজিরপুর থেকে নগরীতে ইয়াবা সরবরাহকারী রাসেল মল্লিকের দেয়া তথ্যমতে বরিশাল নগরীতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা গেছে, নগরীর বগুড়া রোডস্থ সামাজিক বন বিভাগ সংলগ্ন একটি ভবনের মালিকের ছোট ছেলে অয়ন দাস ইয়াবার খুচরা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেম্পুস্ট্যান্ড ও নতুন বাজার এলাকার একাধিক ইয়াবাসেবী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই ভবনের মালিকের ছেলে অয়নের বড় একটি গ্রুপ রয়েছে।
বলতে গেলে যারা সকলেই ধনী পরিবারের সন্তান। রয়েছে তাদের নানা ব্রান্ডের দামী মোটরসাইকেলও। যার মাধ্যমে তারা বরিশাল নগরীজুড়ে ইয়াবার খুচরা ব্যবসা করে থাকেন। আর এরা সকলেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
তারা জানায়, ওই অয়ন দাস সবসময় সরাসরি এই ব্যবসা করে না। তার লোক রয়েছে অসংখ্য। যাদের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি করায় সে। আবার মাঝে মধ্যে সে নিজেও করে। ইদানিং তার কাছে কল করা হলে সে তার লোকের ফোন নম্বর দিয়ে ইয়াবা ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ করতে বলেন।’
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে- নগরীতে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত রয়েছে প্রায় ৬০ জন ধনীর দুলাল। বড় ঘরের সন্তান তারা। সূত্রটি জানায়, এই ৬০জনের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় রয়েছে মথুরানাথ পাবলিক স্কুল সড়কের বাসিন্দা রাজীব। যে ইতিপূর্বে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিপুল সংখ্যক ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে বের হওয়ার পর ধনী পিতার এই ছেলে পুনরায় তার ব্যবসা নির্বিঘেœই চালিয়েই যাচ্ছে।
শুধু রাজীব নয় মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের সামনে সৈকত নামে আরো এক যুবক রয়েছেন যে ইয়াবা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এরা দুইজনেই দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা করছেন নগরীতে। ইতিপূর্বে ইয়াবা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিল বহু ধনী পিতার ছেলে। এদের মধ্যে রেফকো ফার্মাসিউটিক্যালস এলাকার মেহেদী ও মাহামুদুর রহমান রেজা নামে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে একাধিকবার।
এছাড়া বিশ্বস্তু সূত্র জানায়, ঝাউতলা, ভাটিখানা, হাসপাতাল রোড, আমানতগঞ্জ, লুৎফর রহমান সড়ক, বিএম স্কুলের সামনে, নতুনবাজার, বিসিক, বগুড়া রোড, নবগ্রাম রোড ও বিএম কলেজ এলাকার অনেক ধনী পরিবারের ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এদের মধ্যে সবাই পাইকারী ইয়াবা ব্যবসা না করলেও খুচরা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রগুলো। তবে বড় ঘরের সন্তান হওয়া সত্বেও তারা এই ব্যবসা থেকে সরে দাড়াচ্ছেন না। বরং এই ব্যবসায় আরও জড়িত হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
এই বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো: মাহফুজুর রহমান জানান, মাদকবিরোধী অভিযান কারো মুখ দেখে করা হচ্ছে না। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে।
কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। বরিশাল থেকে মাদক নিশ্চিহ্ন করতে আমাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।’
শিরোনামবরিশালের খবর