বরিশাল: বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় যোগদানের পর ওসি শাহ্ আওলাদ হোসেন মামুন কত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন কানাঘুষা প্রায়শই শোনা যায়। কিন্তু একখন্ড ভূ সম্পত্তি দখলে নিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা আসেনি আলোচনায়, জানে না অনেকে। জমির প্রকৃত মালিক প্রতিপক্ষকে দফায় দফায় পুলিশি হয়রানি করে জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলেছেন। সেই সাথে তার ভাই হারুনও অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জমিটি দখলে নিতে অব্যহত সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ায় অজানা শঙ্কায় ভুগছে প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের গোটা পরিবার।’
সর্বশেষ ক্রোস ফায়ারের হুমকি দিয়ে জীবন রক্ষায় জমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুংকার তোলায় শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা পাশ্ববর্তী দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার। অভিযোগ উঠেছে, বরিশাল কোতয়ালি থানায় কর্মরত থেকে চরফ্যাশন পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করছেন ওসি আওলাদ (!) এমতাবস্থায় জমির মালিক প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন মিডিয়ার দ্বারস্থ হলে পুরো বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। ভোলা জেলা প্রেসক্লাবে বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানান দিলেন ওসি আওলাদ ও তার ভাই হারুনের দখল সন্ত্রাসের বিষয়টি।’
অবশ্য এর আগে হয়রানি থেকে রেহাই পেতে জমি বিক্রেতা জেলা আ’লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আমির হোসেন বাচ্চু বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চ মহলকে অবহিত করেছেন। সেই সাথে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করেছিলেন। সর্বশেষ পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার জবরদস্তি করে উপজেলার জিন্নাগড় এলাকায় সেই ২০ শতাংশ জমি দখলে নিতে রাতের আধাঁরে বালু ফেলে। মূলত এতে বাধা প্রধান করাই সিরাজুল ইসলামের কেয়ারটেকার আজগরকে ক্রোসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়।’
সেই সাথে প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদেরও দেশের বিভিন্ন থানায় মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। যে কারণে উপায়ান্ত না পেয়ে শেষাবদি মিডিয়া কর্মীদের দারস্থ হয়েছেন জমি মালিকের ভাই জসিম উদ্দিন। তার ভাষ্য হচ্ছে, ওসি আওলাদ পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে জমিটি জোরপূর্বক দখল নিতে চাইছেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে চরফ্যাশন থানা, ভূমি, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন দপ্তরে বসাবসির পরে রায় তারই অনুকুলে রয়েছে। কিন্তু তারপরও ওসি আওলাদ ও ভাই হারুন জোরপূর্বক জমিটি দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’
এমনকি তার কেয়ারটেকার আজগরকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে জমি থেকে ঘর সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এতে সে অপরাগতা প্রকাশ করায় ওসি আওলাদ তাকে ক্রোস ফায়ারের হুমকি দিয়েছেন। ফলে তিনিসহ তাদের গোটা পরিবার অজানা আতঙ্কে ভুগছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। জসিম উদ্দিন আরও জানান, ২০১৪ সালে ভোলা জেলা আ’লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আমির হোসেন বাচ্চুর কাছ থেকে জমিটি তার ভাই সিরাজুল ইসলাম ক্রয় করেছেন। জিন্নাগড় মৌজার এসএ ১৪৮ নং খতিয়ানের ৫টি দাগে সেই ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। ক্রয়ের পরে জমিতে সীমান প্রাচীর তৈরি করতে গেলে ওসি আওলাদ হোসেন মামুনের প্রভাব খাটিয়ে তার ভাই হরুন সংশ্লিষ্ট চরফ্যাশন থানা পুলিশকে ব্যবহার করে বন্ধ করে দেন। কিন্তু জমিটি দখল নিতে থেমে নেই তাদের অপততপরতা।’
যদিও এক্ষেত্রে ওসি মামুনের অভিব্যক্তি হচ্ছে, জমিটির একটি দাগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। প্রতিপক্ষ সিরাজুল ইসলাম ক্ষমতা দিয়ে রায় নিয়েছে।’ এতো গেল নিজ গ্রাম চরফ্যাশন উপজেলায় মামুনের দখল মিশনের কাহিনী। এবার আসা যাক বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় যোগদান পরবর্তী কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রশ্নে। থানার ইনচার্জ হিসেবে ওসি আওলাদ চলতি বছরের ১১ জুন যোগদান করেন। এর পরপরই ওসি বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে ব্যক্তি বিশেষকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি ভূ সম্পত্তি পাইয়ে দিতেও চালিয়ে যান লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য।’
তাছাড়া বরিশালের আবাসিক হোটেলগুলো থেকেও টাকা উত্তোলনের ঢের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তার এই বাণিজ্যে থানার অধিকাংশ এসআই বিরোধীতা করায় তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। আবার কেউ তার সাথে বলে না উঠতে পারায় কোতয়ালি মডেল থানা ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওসি আওলাদের টাকা উত্তোলনের ক্যাশিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন এসআই সাইদুল হক। সর্বশেষ মাঠ পর্যায়ের এই পুলিশ কর্মকর্তা চলতি বছরের সেপ্টম্বর মাসের প্রথম দিকে আবাসিক হোটেলগুলোতে হানা দিয়ে ওসির নামে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিয়ে আসে। অবশ্য টাকা নিয়ে বেড়িয়ে আসার একটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।’
অথচ হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে অনেকটা স্বচ্ছ মনের মানুষ পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিন জিহাদ ঘোষনা করেছিলেন। এমনকি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ওসিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। একইভাবে মাদকব্যবসায়িদের ক্ষেত্রেও একই হুশিয়ারি ছিল পুলিশ কমিশনারের। এক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ওসি আওলাদ হোটেল ও মাদক ব্যবসায়িদের ডেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার পাশাপাশি নগদ অর্থও আদায় করেন। সেই সাথে মাসন্তর চুক্তির রফাদফাও সেরে নেন। এ বিষয়টি থানা পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাছাড়া টাকা উত্তোলনের একটি মোবাইল রেকডিংও প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।’
এছাড়াও সিএন্ডবি রোডের পাশে একটি বিরোধপূর্ন সম্পত্তি নিয়ে সাম্প্রতিকালে দু গ্র“পের মধ্যে গন্ডগোল হলে জমি মালিক দাবিদার ইঞ্জিয়ার আব্দুল হাইর পক্ষে রিপোর্ট দেয়ার কথা বলে ৭ লাখ টাকা নেন ওসি আওলাদ। এই লেনদেনটি করিয়ে দেন ইঞ্জিনিয়ারের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত আইয়ুব আলী নামে এক ব্যক্তি। ফলশ্র“তিতে টাকাগুলো নিয়ে আসে ওসির গাড়ির ড্রাইভার আনোয়ার ও বডিগার্ড মনোয়ার। তাছাড়া নগরীর রূপাতলী এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ি রাইভিউল কবির স্বপনের ছেলের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার চুক্তিতে ৫ লাখ টাকা নগদ নিয়ে নেন ওসি আওলাদ। কিন্তু বিধিবাম! উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ এই ব্যবসায়ির পরিচিত হওয়ায় তিনি পর্যন্ত বিষয়টি গড়িয়েছিল। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওসির মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
বরিশালের খবর, ভোলা