বরিশাল: উজিরপুরে আমেরিকায় তৈরী নাইন এমএম পিস্তল, গুলি এবং অর্ধশতাধিক পিস ইয়াবাসহ উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শীর্ষ সন্ত্রাসী শিপন মোল্লা ও তার ৩ সহযোগিকে আটক করেছে পুলিশ।
গত রবিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ন আহবায়ক শিপন মোল্লা, আনিচুর রহমান, আল-আমিন ও আসাদুর রহমান আসাদ।
এদিকে আটকের কয়েক ঘন্টা পর ক্ষমতার প্রভাব এবং মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল শীর্ষ সন্ত্রাসী শিপন মোল্লাকে ছাড়িয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উজিরপুর থানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অস্ত্র হেফাজতে থাকার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রবিবার দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার তেরদ্রন গ্রামে অভিযান চালিয়ে আনিচুর রহমান ও আসাদুর রহমান আসাদকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী ওই রাতেই আটক করা হয় অস্ত্র বিক্রেতা আল-আমিনকে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল-আমিন তার কাছে অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার হেফাজত থেকে আমেরিকায় তৈরী একটি নাইন এমএম পিস্তল, ১ রাউন্ড গুলি এবং ৫৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটক আনিচ, আল-আমিন ও আসাদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বহু অভিযোগ রয়েছে। এরা শিপন মোল্লার ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আলামিন ও আনিচ জানায়, তাদের আরেকটি নাইন এমএম পিস্তল উজিরপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ন আহবায়ক শিপন মোল্লার কাছে রয়েছে। পাওনা টাকার বিনিময়ে তারা ওই অস্ত্রটি শিপন মোল্লাকে দিয়েছে। তদের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে সোমবার সকালে শিপনকে তার পৌর শহরের বাসা থেকে আটক করে পুলিশ।
শিপন পৌর প্রয়াত রশিদ মোল্লার ছেলে। নব্বইয়ের দশকে প্রতিপক্ষ সর্বহারা কামরুল গ্রুপের হাতে নিহত হয় সর্বহারা জিয়া গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা রশিদ মোল্লা। অস্ত্র, ছিনতাই, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বাবু লাল শীল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন। শিপন উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের প্রধান ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তাকে আটকের খবর পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে থানায় চলে যান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইকবাল। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা থানায় অবস্থান করে পুলিশকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে দুপুরে আটক শিপন মোল্লাকে উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়িয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উজিরপুর থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, আটককৃত আসাদ, আল-আমিন ও আনিসের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি ও ৫৫ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আল-আমিন ও আনিচের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে এবং আসাদ ও আল-আমিনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওসি দাবী করেন, শিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছিল। কোন অবৈধ লেনদেন কিংবা চাপের মুখে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়নি।
জেলা পুলিশ সুপার এসএম আক্তারুজ্জামান জানান, পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে আর কারোর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।