বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, ২৬ অক্টোবর ২০১৭
বরিশাল আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামের মাস্তানির শিকার হয়েছেন বিদ্যুত বিভাগের কর্মচারী জামাল উদ্দিন। খোড়া অজুহাতে ওই কর্মচারীকে পিটিয়ে শেষাবধি নিজেই আইন হাতে তুলে নিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে দেখালেন তার ভয়ানক রুপ। বরিশাল বিদ্যুত বিভাগের কর্মচারী (বিল বিতরণকারী) জামাল উদ্দিনকে পিটিয়ে কান ফাঁটিয়ে দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে ভুক্তভোগী ন্যায় বিচার পেতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিচার চেয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থাৎ এপিবিএন’র অধিনায়কের কাছে আবেদন করেছেন। অবশ্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছেন সেখানকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা।
এই পুরো বিষয়টি এপিবিএন পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। অবশ্য জসিম উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগের একটি কপিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- রুপাতলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা এপিবিএন পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলামের ছেলে আজিজুল হাকিমকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট স্থানীয় বেশ কয়েক জন যুবক মারধর করে।
ওই ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ১০জনকে অভিযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার প্রধান আসামির নাম বিদ্যুত বিভাগের কর্মচারী জামাল উদ্দিনের ছেলে নামের সাথে মিলে যায়। যদিও মামলায় অভিযুক্ত আকাশ যে জামাল উদ্দিনের ছেলে না সে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েও হয়রানি করতে সুযোগ নেন এসআই শফিকুল ইসলাম।
কারণ ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২২ আগস্ট তার ছেলে আজিজুল হাকিম নিজেই শনাক্ত করেছিলেন এই আকাশ তাকে মারধর করেনি। এবং মামলায় অভিযুক্তও নয়। কিন্তু তার পরেও ২৪ আগস্ট রাতে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামালকে নিয়ে আকাশকে ধরে নিয়ে আসা হয়। ওই বিষয়টি ফের বিবেচনার পরামর্শ দিলে তাকে নিয়ে যাওয়া রুপাতলী হাউজিংয়ের ‘জামান ভিলা’ নাম ভবনে ওই পুলিশ কর্মকতার ছেলের কাছে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতেই এসআই শফিকুল ইসলামের আজিজুল হাকিম ফের জানিয়েছে দেয় এই আকাশ অভিযুক্ত নয়। ওই সময় বারবার পুলিশ ও নিজেরা গিয়ে হয়রানির বিষয়ে প্রশ্ন তুললে এসআই শফিকুল বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী জামাল উদ্দিনকে বেধড়ক পিটুনি দেন।
একপর্যায়ে তার পিটুনিতে জামালের কান ফেঁটে রক্ত বের হতে শুরু করে। সেই দিন রাতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য না হলে ২৬ আগস্ট তিনি শেবাচিমে ভর্তি হন। সেখান থেকে সুস্থ্য হয়ে ৩০ আগস্ট বাসায় ফিরলেও তিন মাস পরে অপারেশনের পরামর্শ ডাক্তাররা। কিন্তু গরীব হওয়ার কারণে তিনি ওষুধ কিনতে না বিষয়টি বরিশাল সদর আসনের সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজকে অবহিত করে বিচার চেয়েছিলেন। ওই সময় এই সাংসদের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি পরবর্তীতে এপিবিএন অধিনায়ককে অভিযোগ আকারে অবহিত করা হয়। যার প্রেক্ষিতে অধিনায়কের নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি তদন্ত করছেন এএসপি জহিরুল ইসলাম।
যদিও নিশ্চিত হওয়া গেছে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযোগকারীকে ইতিমধ্যে ডেকে নিয়ে তার বয়ান গ্রহণ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এমনকি বুধবার রাতে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক এসআই) কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কিন্তু সেখানে তিনি কী বয়ান দিয়েছেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া যায়নি। তবে এসআই কামাল এ প্রতিবেদককে বলছেন- সেই দিন রাতে এপিবিএন এসআই ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীর মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়েছিল। কিন্তু জামাল উদ্দিনকে মারধর করেছে কী না সেই বিষয়টি আমি বলতে পারছি না। কারণ পুলিশপুত্র মারধরে এই আকাশ জড়িত না শুনেই তাকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে আসি।
ওই সময় কর্মচারী জামাল উদ্দিনকে কাতরাতে দেখে তাকে বাসা থেকে বেড় করে নিয়ে আসি। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারছি না বলেন এসআই কামাল। যদিও এসআই কামাল এমন বক্তাব্য দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে সেইভ করতে চাইছেন বলে মনে করছেন অভিযোগকারী। তার ভাষায় পুলিশ তো পুলিশের সাপোর্ট করবেই, কিন্তু তদন্ত বেড়িয়ে আসবে কে অপরাধী আর কে নিরাপরাধ। তবে এই বিষয়ে নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করে অভিযুক্ত এসআই শফিকুল ইসলাম বলছেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
যে বিষয়টি তদন্তে বেড়িয়ে আসবে মলে দাবি করছেন তিনি। যদিও এই বিষয়টির পুরোপুরি তদন্ত শেষ না করে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না এপিবিএন’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে বলছেন অভিযোগের প্রমাণ মিললে অভিযুক্ত অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে- এই ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন এসআই শফিকুল ইসলাম। কারণ অনেকটা স্বচ্ছ মনের মানুষ এপিবিএন অধিনায়ক আবু নাসের খালেদ কখনোই অন্যায়কে প্রশয় দেননি। তাছাড়া বিষয়টির তদন্তের দায়িত্বে থাকা অপরাধের সাথে আপোষ করার মত নন। সুতরাং অভিযোগের প্রমাণ মিললে বিষিয়ে উঠতে পারে এসআই শফিকুল ইসলামের ভবিষ্যত।”