১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশালে বিপাকে চামড়া ব্যবসায়ীরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:২৮ অপরাহ্ণ, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বরিশাল: বরিশালে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। এর কারণ হিসেবে মূলধন কমে যাওয়া, সঠিক দাম না পাওয়া, মৌসুমী কসাইদের কারণে চামড়ার মানে প্রভাব ফেলা, লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ার মতো অভিযোগগুলোকে তুলে ধরছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও পাইকারদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মাঝেই প্রচুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন বরিশালের পদ্মাবতী রোডের ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বরিশাল পোর্টরোডের চামড়া পট্টি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে এখানে চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেন মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। দুপুরে মাঝারি আ‍কারের একটি গরুর চামড়ার দাম হাজার টাকা দেওয়া হলেও বিকেল হওয়ার আগেই এর দাম কমতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর এসব চামড়া ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় কিনতে দেখা গেছে পাইকারদের। তবে বড় চামড়ায় দাম এর চেয়ে একটু বেশি ছিলো।

সন্ধ্যায় একেকটি ছাগলের চামড়া ক্রয় করা হয় ২০ থেকে ৩০ টাকায়। এই দামে বিক্রি হয় বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত।

দাম কম হলেও বিকল্প বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় এখানেই মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হন। ফলে কোরবানির ঈদকে পুঁজি করে যেসব মৌসুমী ব্যবসায়ী তৃণমূল থেকে চামড়া কিনে এখানে এসেছেন তাদের মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

এরই মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই সরগরম হয়ে ওঠা পদ্মাবতী রোডে চামড়া সংরক্ষণ করার কাজ শুরু হয়েছে। শ্রমিক সংকট থাকায় এ কাজ আরও ১/২ দিন চলবে বলে জানিয়েছেন মোকাম ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, দ্বিতীয় দিনে কোরবানির পশুর চামড়াগুলো সকাল থেকে চামড়া পট্টিতে আসতে শুরু করে।

মোকামের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের চামড়ার দাম কম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ মৌসুমী ব্যবসায়ীদের।

অপরদিকে, অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত দামের চেয়ে দাম বেশি দিয়েও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের খুশি করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাইকারদের।

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহিন জানান, কম মূল্যে চামড়া ক্রয় করার বিষয়টি ভিত্তিহীন, বরিশালের পাইকাররা সর্বোচ্চ চামড়ার মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বরিশালের পাইকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা না বলে ঘোষণা অনুযায়ী আবার অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি দামেও চামড়া কিনেছেন। আবার মৌসুমী কসাইদের কারণে ছুড়ি/চাকুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চামড়াও তারা চড়া দামে কিনছেন।

অপরদিকে, বরিশাল থেকে ট্যানারিতে চামড়া পাঠানোর জন্য যে সংরক্ষণের কার্যক্রম চালানো হয়, তার খরচের কথা একবারও মাথায় রাখেনি তারা।

তিনি আরও জানান, এছাড়া লবণের অতিরিক্ত দামের কারণে চামড়া প্রসেসিংয়ে খরচ এ বছর বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। পাশাপাশি ঈদের সময় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে, যা মিলছে তাও চড়া মূল্যে। আর অভিজ্ঞ শ্রমিক ছাড়া চামড়া সংরক্ষণের কাজ করা কঠিন। শ্রমিক না পেয়ে অনেকে আবার স্থানীয় প্রক্রিয়ায় বরফ দিয়ে চামড়া ভালো রাখার চেষ্টা করছেন।

মৌসুমী ব্যবসায়ীদের একজন তরিকুল ইসলাম বলেন, গতবারের চেয়ে এবার গরুর একটি চামড়ায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার ট্যানারির এজেন্টরা সবাই এক জোট হয়ে কম দাম দিচ্ছে। আর ছাগলের চামড়া তো ২০ টাকায় কিনছেন তারা।

অপর মৌসুমী ব্যবসায়ী জলিল বলেন, এখানে চামড়া আনার পর মোকাম মালিকরা এমন একটা ভাব করছেন, তাদের চামড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। দিলে দিয়ে যেতে পারেন।

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. শামিম  জানান, লোকসান আর ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়া টাকা আটকে থাকায়, এবারে মূলধন কম নিয়ে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। তাই ইচ্ছে থাকলেও অল্প চামড়া কিনেই তারা ঘরে উঠে যাচ্ছেন। অনেকে তো এ ব্যবসা ছেড়েই দিয়েছেন।

23 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন