বরিশালে বেহাল সড়কে চরম দুর্ভোগে অপরূপ লাল শাপলার পর্যটকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: গ্রামের নামেই বিলের নাম ‘সাতলা বিল’। দখিনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়ানো লাল শাপলার বিল সাতলা। ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনই পাখিডাকা ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে বিস্তীর্ণ এলাকা।
বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটারের দূরত্বে এ পর্যটনকেন্দ্রে আসা-যাওয়া এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে। কারণ বরিশাল টু উজিরপুরের সাতলা সড়কের ২৭ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দুই-একটা বাস চলাচল করলেও যাত্রীদের অবস্থা করুণ। কারণ গত ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে এ সড়কের সংস্কার হয়নি। এ কারণে কোনো কোনো পর্যটক বরিশাল থেকে গৌরনদী উপজেলা হয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট হয়ে শাপলার বিলে ঢুকছেন।
সেখানে আসা-যাওয়ায় বাড়তি ১৮ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। এর মধ্যেও প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। সড়কে দুর্ভোগের কারণে এ বছর পর্যটক কমে গছে বলে জানান নৌকার মাঝি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ষার শুরুতে ফুটতে শুরু করে এ ফুল। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে শাপলার মৌসুম। ১০ হাজার একর জলাভূমির মধ্যে জন্ম নেওয়া লাল, নীল ও সাদা রঙের কোটি কোটি শাপলা একনজর দেখার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের হাজারো পর্যটকের ভিড় থাকে।
পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে। এ বিলে ভ্রমণের জন্য রয়েছে ছোট আকারের নৌকা। সূর্যের উদয়ক্ষণে সূর্যরশ্মি পড়া মাত্রই যেন মন পাগল করা এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয় সাতলা বিল।
সড়কে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায়-সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দিচ্ছে। বিলের কালচে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা।
এর মাঝেই সাদা বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, ফিঙে, শালিক, দোয়েল, চড়ই, কাঠঠোকরাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় প্রজাতির পাখির কলকাকলি তো আছেই। ২-৩ বছর ধরে বেহাল সড়কে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন পর্যটকরা।
শাপলার বিলের পর্যটক আশরাফুজ্জামান বলেন, বরিশাল থেকে উজিরপুর উপজেলার ইসলাদী পর্যন্ত মাত্র ৩০ মিনিটে এসেছিলাম। এরপর মাত্র ২৭ কিলোমিটার আসতে আমাদের সময় লেগেছে প্রায় ২ ঘণ্টা। এই যাত্রা ছিল দুর্ভোগের।
প্রশাসনের উচিত সড়কগুলো সংস্কার করে এই শাপলার বিল উন্নয়নে কাজ করা। পর্যটকরা এসে বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়া করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। না হলে প্রকৃতিপ্রেমীরা আগ্রহ হারাবে। ঢাকা থেকে বরিশাল নগরীতে বেড়াতে আসা সাবরিনা দোলা বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল বাসে করে সাতলা যাব।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে যখন জেনেছি রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ, তখন সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া হয়ে সাতলা গিয়েছি। যদিও এজন্য আমার আলাদাভাবে গাড়ি ভাড়া ও অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়েছে। আলিশা রিয়া বলেন, রাস্তায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এখানে এসে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য সব কষ্ট দূর করে দিয়েছে। শাপলা বিলের সৌন্দর্য অবগাহনে তিনি ও তার স্বামী রিমন মুগ্ধ।
বিলের নৌকার মাঝি অরবিন্দু বলেন, রাস্তার কারণে গত বছরের চেয়ে পর্যটক কম আসছে। রাস্তা ঠিক না হলে আমাদের নৌকার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে। সাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, সাতলার রাস্তার অবস্থা ভালো না।
এ কারণে বরিশাল-২ আসনের সংসদ-সদস্য শাহে আলমের উদ্যোগে ২৪ ফুট করে ২৭ কিলোমিটার রাস্তা করার প্রকল্পটি পাশ হয়েছে। এছাড়া হারতা থেকে সাতলা পর্যন্ত রাস্তায় রোলার করা হচ্ছে। আসা করছি, ৬ মাসের মধ্যে সড়ক উন্নয়ন হয়ে যাবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, সড়ক উন্নয়ন হলে সাতলার বিল নিয়ে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে সাতলাকে পর্যটনকেন্দ্র করার বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনকে লিখিতভাবে অভিহিত করা হয়েছে। অতিসত্বর সেখানে খাবার পানি ও বাথরুমের ব্যবস্থা করা হবে। রেস্টহাউজ করার চেষ্টা চলছে।
শিরোনামবরিশালের খবর