১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

বরিশালে ভুয়া খতিয়ানে দখল ২৬ একর খাসজমি

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১৭ অপরাহ্ণ, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালের মুলাদীতে প্রায় ২৬ একর সরকারি (খাস) জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া খতিয়ানে এসব জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান, বিনোদনকেন্দ্র ও বিভিন্ন স্থাপনা।

এমনকি প্লট আকারে হচ্ছে হাতবদল। বিষয়টি জানার পর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ভুয়া খতিয়ান বাতিল ও দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিজাম উদ্দিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্লট ক্রেতা বলেন, ‘বাড়ি করার জন্য ১৫ লাখ টাকায় ৪ শতাংশ জমি কিনেছি। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে গিয়ে জানতে পারি, যথাযথ কাগজ না থাকায় রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জমি ভোগদখল করছি। ভবিষ্যতে কী হবে বুঝতে পারছি না।’

উপজেলা ভূমি কার্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরডিক্রি মৌজার হিজলা-মুলাদী সংযোগ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৩৫ একর খাসজমি রয়েছে।

এসএ জরিপের আগে নয়াভাঙনী নদীর অববাহিকার এ জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা তাঁদের পূর্বপুরুষের নামে ভুয়া খতিয়ান খুলে দখল করেন প্রায় ২৬ একর জমি।

মুলাদী বন্দরের ব্যবসায়ী আহসান হাবিব বলেন, ‘২০২২ সালে একটি চক্র সরকারি জমি দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। ওই বছর ভূমি কার্যালয়ের সহযোগিতায় চক্রটি ১৯৭৫ সালের ২৯৩ নম্বর মিসকেস দেখিয়ে কতগুলো খতিয়ান তৈরি করে।

ওই খতিয়ানগুলোতে উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের পূর্বপুরুষদের নাম রয়েছে।’ অবৈধভাবে দখল করা সরকারি জমি হাতবদল করা হচ্ছে বলে জানান তেরচর গ্রামের মো. তৌহিদুর রহমান।

তিনি বলেন, এসব জমি রেজিস্ট্রি না হওয়ায় ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ হস্তান্তর কিংবা স্ট্যাম্পে লিখে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বালু ভরাট করে প্লট আকারেও করা হচ্ছে হাতবদল।

বেদখল হওয়া জমির দাম ১৩০ কোটি টাকার বেশি। বিষয়টি জানার পর দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

গাছুয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. আলাউদ্দীন বলেন, চরডিক্রি মৌজার প্রায় ২৬ একর জমি ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে দখল করা হয়েছে।

বিষয়টি জানার পর খতিয়ান বাতিল ঘোষণাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর ভুয়া খতিয়ান বাতিল ঘোষণার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি জমি উদ্ধারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরাগ শাহা বলেন, ‘আমি তিন দিন আগে উপজেলায় যোগদান করেছি। ভুয়া খতিয়ান খোলা কিংবা সরকারি জমি দখলের বিষয়টি জানা নেই। তবে কেউ অবৈধভাবে জমি দখল করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউএনও মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গত ১৬ আগস্ট সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম ভুয়া খতিয়ানে জমি দখলের বিষয়টি জানতে পারেন।

অবশ্য এর তিন দিন পর বদলি হন তিনি। নতুন সহকারী কমিশনারের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারি জমি উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

115 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন