বরিশালটাইমস, ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ অপরাহ্ণ, ১৬ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশাল-কুয়াকাটা ও বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছে। পুলিশ জানমাল রক্ষায় আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, “পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় জড়ো হয়।
সাড়ে ৩টার দিকে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।”প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিহতের ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠি ও বাঁশ রয়েছে।
ব্রজমোহনে সংঘর্ষ
এদিকে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বরিশালে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার দাবি করা হলেও তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে বি এম কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে তারা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেন। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় অবস্থান নেওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটা অংশ লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তারা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অশ্বিনী কুমার হলে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে ওই হলের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরাও। এ সময় ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে।
নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড ফাঁকা
এদিকে বিকালে এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, নথুল্লাবাদ এলাকায় পুলিশ বক্সে হামলার অভিযোগে কাঁদুনে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা আকস্মিক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল জালাল আহম্মদ শরীফ পুলিশ বক্সে হামলা করে। এ সময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
পুলিশ বক্সে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য সামান্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আটটি কাঁদুনে গ্যাস ও ২৪টি শটগানের ফাঁকা গুলি করা হয়। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বলে জানান লোকমান হোসেন।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিকাল ৫টার দিকে বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনস্থল থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। এর কিছু সময় বাদে ওই শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, নথুল্লাবাদ এলাকার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল জালাল আহম্মদ শরীফ পুলিশ বক্সে তাদের কয়েকজন সহপাঠীকে আটক করেছে পুলিশ।
এমন খবরে শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার পর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, “আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোনো তথ্য যাচাই না করে পুলিশ বক্সের দিকে তেড়ে আসেন। কোনো এক ছাত্র দৌড়ে পুলিশ বক্সে ঢুকলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
“তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে। ইট-পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কমবেশি আহত হয়েছেন। আর পুলিশের মালামাল বলতে মোটরসাইকেল ভাঙচুরের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সামনে এসেছে। তবে সঠিক বিষয়টি নিরূপণ করতে সময় লাগবে”, বলেন উপ-কমিশনার আশরাফ ভুঞা।
ছাত্রলীগ নেতাকে উদ্ধার, আহত পুলিশ
সকালে বি এম কলেজের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে গিয়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকজন কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রকে ক্যাম্পাসে পেয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে।
বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে কোটা আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ছয়-সাতজন আহত হয়।
কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শক্তিশালী হলে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস এলাকায় কোণঠাসা করে ফেলে। পরে সেখান থেকে ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী বের হয়ে যায়।
কিন্তু ছাত্রলীগ কর্মী শিবলী ডিগ্রি হলের জামে মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মসজিদ ঘিরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম কিবরিয়া অন্যান্য শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে মসজিদে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের কাছে যান।
তাদের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রলীগ কর্মী শিবলীকে সেখান থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীকে কান ধরে উঠবস ও ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু তা না করে পুলিশ ও শিক্ষকরা ব্যারিকেড দিয়ে ছাত্রকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তখন ছাত্ররা লাঠিসোটা নিক্ষেপ শুরু করে। এতে শিবলী আহত হয়।
বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিক্ষেপ করা লাঠি ও ইট-পাটকেলে তিনিসহ পুলিশের ৮-১০ জন আহত হয়েছে। ডিগ্রি হলের মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া শিবলীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী শিবলীও আহত হয়েছেন।
বি এম কলেজের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হুাজাইফার রহমান বলেন, “আমরা অহিংস গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। সেখানে অতি উৎসাহীরা কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো ঢুকে পড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”