বরিশাল: মহাষষ্ঠীতে বোধনের মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা এবার স্বামীর গৃহ কৈলাস থেকে বাবার বাড়ি বসুন্ধরায় আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে। ফিরবেনও ঘোড়ায় চড়ে।
এ বছর বরিশাল নগরীতে ৩৫টি এবং জেলার ১০ উপজেলায় ৫৩৭টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গা মণ্ডপে চলবে ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, মহাপ্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা।
শুক্রবার সকালে বরিশাল নগরীর শঙ্করমঠ ও কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। নারী-পুরুষ-শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মণ্ডপগুলো।
দেবী বোধন ও অধিবাস সহকারে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হলো পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। শাস্ত্র মতে, এবার মা দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে আসার কারণে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে।’
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কণ্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।
পুরোহিতরা জানান, শুক্রবার প্রাতঃকালে ষোড়শ উপচারে দেবীর আবাহন করেছি আমরা। সকাল ৮টার দিকে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে হয়েছে বোধন বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। ষষ্ঠী তিথিতে বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গোৎসবের সূচনা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবির সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।
শাস্ত্র মতে, সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন শনি এবং ফেরার দিন মঙ্গলবার হওয়ায় এবার তার আসা-যাওয়া দুটোই হবে ঘোটকে, অর্থাৎ ঘোড়ায় চেপে। এর ফল হবে ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। অর্থাৎ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে ঘটবে অস্থিরতা। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু বাড়বে।
রোববার মহাঅষ্টমী পূজার পর হবে কুমারী পূজা। সেদিন সন্ধ্যায় সন্ধিপূজা। এরপর সোমবার মহানবমী। মঙ্গলবার সকালে দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বিঘেœ শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব পালনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বরিশাল জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একাধিকবার প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ এবং আনসার মোতায়েন থাকবে। এছাড়া র্যাব টহল দেবে। গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিক পূজা মণ্ডপগুলো নজরদারি করবে। সর্বোপরি উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। এছাড়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারি কমিশনার (এসি) ফরহাদ সরদার জানান, সর্বদিক বিবেচনা করে পূজা মণ্ডপগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাধারণ। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ ছাড়াও ৬ জন পুরুষ ও ২ জন নারী আনসার সদস্য, কম ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপে পুলিশ ছাড়াও ৪ জন পুরুষ ও ২ জন নারী আনসার সদস্য এবং সাধারণ মণ্ডপে পুলিশ ছাড়াও ২ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী আনসার সদস্য দায়িত্বে থাকবেন।’
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর