বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৬:৪১ অপরাহ্ণ, ০২ এপ্রিল ২০১৭
বরিশাল শহরের রাস্তা-ঘাটে এখন না হাটলে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না ঢাকা শহর আসলে কেমন। আরও বিশ্বাস করতে পারবেন না যে ঢাকা শহরের সাথে বরিশালের দূরত্ব কমে গেছে। কেউ নাকে রুমাল চেপে, কেউ লাফিয়ে লাফিয়ে, কেউ আবার জনপ্রতিনিধিদের গালি দিতে দিতে চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে রাস্তা পার হচ্ছে। যে চিত্র হরহামেশাই রাজধানী ঢাকাতে দেখা যায়। এর মাধ্যমে দুটি অবজেক্ট লুকিয়ে আছে। প্রথমত সমস্যা। দ্বিতীয়ত সম্ভাবনা। সমস্যা হলো বরিশাল নগরী যেন তার বাসযোগ্যতা হাড়াচ্ছে। সম্ভাবনা হলো ঢাকাইয়া নমুনা।
অর্থাৎ ঢাকার রাস্তায় চলাচল করতে গেলে চারপাশের ভয়াবহ গন্ধ-ধুলো-ময়লাযুক্ত পলিথিন যেভাবে উড়ে এসে নাকে মুখে লাগে তেমনি বরিশালের পরিবেশ তৈরী হয়েছে। ঢাকার পরিবেশের সাদৃশ বরিশালে যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু বরিশালও ঢাকা হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন পরিচালিত সমস্যা ও সম্ভাবনাগ্রুপে প্রবল আলোচনা হতে পারে। তার মাধ্যমে আশা করেছিলাম কেউ কেউ ঝাড়–-বেলচা-ট্রলি নিয়ে সড়কে নেমে বরিশাল ক্লিন প্রগ্রামের উদ্বোধন করতে পারেন। সেইসব ফোটো ফেসবুকে পোস্ট করে ফাটিয়ে দিতে পারেন। যারা এমন ফেসবুক সর্বস্ব ব্যাপক ক্লিন প্রোগ্রাম হাতে নিবেন তাদের মধ্যে একটি হতে পারে পিপিলিকা চ্যারেটি ক্লাব বরিশাল ইউনিট। অন্যরাও হতে পারেন। আমি ভুল বলছি না।
বিগত দিনে এমনটাই দেখে অভ্যাস্ত হয়েছি। তখন অবশ্য ফাঁকা রাস্তা বা পরিস্কার রাস্তা পরিস্কার করতে এহেন আয়োজন দেখেছি। ধরুন তৈলাক্ত মাথায় তেল দিয়ে ভিজিয়ে ফেলার মত দশা। যেখানে জেলা প্রশাসক, মেয়র বা গন্যমান্য নাগরিকদের উপস্থিতি মোটেও অকল্পনীয় নয়। কিন্তু কেউতো মাঠে নামছে না। আসলে কারনটা কি? পাঁচ লাখ মানুষের বসবাসের শহর থেকে হঠাৎই কি উল্লেখিত ভয়ংকর রকমের জনদরদী আমলা-কামলারা পালিয়েছে (!) কিন্তু তা তো নয়। আমার ধারনা গর্তে ঢুকেছে। কারন যে ময়লার নিচে চাপা পরেছে বরিশাল নগরী তা পরিস্কার করার দায়িত্বতো তাদের নয়। তাহলে তারা নামবেন কেন? আরও একটি কারন হতে পারে। প্রকৃত সমস্যা সমাধান করলেতা পকেটে ‘নান্টু’ ঢুকবে না। সে কারনে পিপিলিকা তাদের গর্তে ঢুকে পরেছে। আর উদ্বোধকরা যেন কিছু জানছেই না যে নগরীতে কি হচ্ছে। কথা হলো নগরীটা ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলন চলছে। তারা প্রায় পাঁচ মাস বকেয়া বেতন পাচ্ছে না। যদিও তাদের আউট ইনকামের পথ বন্ধ নেই তারপরও বকেয়া বেতন পাবার অধিারতো রাষ্ট্রই দিয়েছে। সুতরাং আন্দোলন হতে পারে। তাই বলে নগরবাসীর সাথে তাদের শত্র“তা হতে পারে না। কিন্তু সিটি করপোরেশনের আন্দোলনের মোড়কে যা হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে নগরবাসীর দেয়া ট্যাক্সে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রুটি-রুজি যোগে তারাই একমাত্র শত্র“। নয়তো নগরীর পরিবেশের অবনতি ঘটিয়ে এমন আন্দোলন কিসের জন্য? বেতনের আন্দোলনতো নগর ভবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তাতো বাইরে বের হবার কোন যুক্তি রাখে না। যেহেতু বাইরে বেরিয়েছে সেহেতু আরও অনেক সমীকরণ এখানে মিলে যায়।
আন্দোলনটা সমর্থনযোগ্য হতো যদি ভিন্ন অদলে চলতো। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনদুর্ভোগ লাঘব করে যদি আন্দোলনে নামতো। তারা আন্দোলনে যাবার আগে নগরবাসীকে জানাতে পারতো যে প্রতিদিন নির্ধারিত স্থানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ময়লা আর্বজনা ফেলে যাবে। করপপোরেশনের ট্রাক একবার এসে তা নিয়ে যাবে। আর নগর ভবনের অভ্যান্তরীণ সকল কাজ বন্ধ থাকবে। অথচ তা তারা না করে এমন আন্দোলন করছেন যে নগরবাসী যেন ফুসে উঠতে পারেন। এই আন্দোলন প্রতিহত করতে নয়, বরংছ নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করতে রাজনৈতিক নেতারা নামতে পারতেন। তাহলেই বোঝা যেত যে তারা নাগরিকদের জন্য বা জনগনের জন্য রাজনীতি করেন। কিন্তু এখন বড় বড় ভাষণ আর গর্জন করা নেতা লস্করদেরও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধরুণ তারুণ্যের অহংকারখ্যাত যুবরত্ন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কথাই। তিনিওতো একবার নেমে নেতাকর্মীদের নিজ দ্বায়িত্বে নগরী পরিষ্কার করতে বলতে পারতেন। অতীতে যেমন যাত্রা বন্ধে মানবন্ধন করেছিলেন তেমনি জনসম্পৃক্ত এই কাজটিও তার দ্বারা আশা করা যেত। কিন্তু তিনি নগরবাসীর এহেন দুর্ভোগে পাশে দাড়াচ্ছেন না। আবার শোনা যাচ্ছে তিনিই পরবর্তী মেয়র নির্বাচিত হবেন। তিনি বরিশালের ডায়নামিক নেতা। কিন্তু তার প্রমান কোথায়? নগরবাসীর দুর্দিনে পাশে দাড়ালে ক্ষতি হতো কি।
এখান থেকে অনুমান করা সম্ভব তিনিও রাজনীতি রাজনীতির প্রয়োজনে আর নিজের স্বার্থে করছেন। হয়তো তিনি সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন কারন এতে তার অনুসারীদের কোন ফায়দা নেই। হ্যাঁ বলতে পারেন সাদিক আব্দুল্লাহ রাজনৈতীক ফিগার। আর তিনি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ববান এমন কেউ নন যে করপোরেশনের ঝামেলা তাকে সামলাতে হবে। উত্তরটা হলো, তিনিতো এই নগরীর বাসিন্দা। তাছাড়া তিনি রাজনীতি করছেন কার জন্য? নগরবাসীর জন্যইতো। তাছাড়া আন্দোলন মঞ্চে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বহিরাগত হিসেবে তার অনুসারীদের তো দেখা যায় একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তৃতা বা উস্কানি দেয়। তাহলে তারা সেখানে কেন? আমরা সবাইতো আঁচ পেয়ে গেছি পরবর্তী নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী তিনি। যখন কারও কথাই শুনছে না নগরভবনের কর্মচারীরা তখন তিনি গেলেন, আশ্বাস দিলেন। আন্দোলন থেমে গেল। ব্যাস জনপ্রিয়তা পেল বিশাল। তবে এমন রাজনীতি করাটা ঠিক হবে বলে মনে করি না। কথা উঠতে পারে আ’লীগের সভাপতি সম্পাদক বাদ দিয়ে কেন সাদিক আব্দুল্লাহকে লিখছি। কারন সাদিক আব্দুল্লাহ পদে ছোট হতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সভাপতি সম্পাদকের চেয়ে নগরবাসী সাদিক আব্দুল্লাহয় ভরসা করে। অথবা জেবুন্নেছা আফরোজও পারতেন এগিয়ে আসতে। তার স্বামীর রেখে যাওয়া সৌন্দর্যমন্ডিত নগরীকে সুরক্ষা করতে। কিন্তু তিনিও তাতে নারাজ।
এখানে এটুকু নিশ্চিত রাজনীতিবিদরা সকল কিছু নিয়েও রাজনীতি করেন। শেষ পর্যন্ত ময়লা নিয়েও রাজনীতি করতে শুরু করেছেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বাসায় মিডিয়াকর্মীদের ডেকে জানিয়েছেন তিনি দুধের ধোয়া। যেহেতু তিনি ব্এিনপি নেতা। তার উপরে বিএনপির ছয় কাউন্সিলন সদ্য বহিস্কৃত হয়েছেন। এর আগেও একজন হয়েছিলেন। এই আক্ষেপগুলো কি তার মধ্যে নেই? সে কারনে তিনি কি চাইবেন না এমন কিছু করতে যাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়? কৌশলে তিনি সেই কাজটিই করছেন। এ আন্দোলনে সবচেয়ে বড় মদদ রয়েছে মেয়র কামালের। তিনি একদিকে বিএনপি নেতাদের বহিস্কারের প্রতিশোধ নিচ্ছেন নগরভবন অচল করিয়ে। অন্যদিকে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। নগরবাসী এমনটা বুঝতে পারলেও আদৌ কি বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন আ’লীগ নেতারা।
তাছাড়া জনপ্রিয়তা প্রিয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ও কি সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হয় এমন কর্মসূচীর বিপরীতে নগরী পরিষ্কার রাখতে পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারতেন না? বিগত দিনগুলোতে যেভাবে জনসম্পৃক্ত হয়ে কাজ করেছেন তিনি, সরকারের সুনাম বৃদ্ধি করতে যেভাবে কাজ করেছেন, এখন কেন এ্যাবসেন্ট মাইন্ডে তিনি? প্রশ্ন উঠতেই পারে। সবশেষে একথা বলা যায়, সিটি করপোরেশনে বর্তমানে সেই পুরানো দ্বন্দ্ব আ’লী-বিএনপির লড়াইটাই চলছে। অর্থাৎ সরকারের বেতনভুক্ত জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো: সাইফুজ্জামান, সরকারের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সরকারের দলের পদপ্রাপ্ত নেতা সাদিক আব্দুল্লাহ কেউই যেন এই মূহুর্তে সরকারের হয়ে কাজ করছে না। তারা কেউই নাগরিক সেবার হয়ে কাজ করছে না। যদি করতো নিঃসন্দেহে নগরী ময়লা-আর্বজনার নিচে চাপা পড়তো না। আশা করবো, লোক দেখানো কোন পদক্ষেপ নয়; প্রকৃতপক্ষে জনগনের হয়ে কাজ করতে সবার শুভ বুদ্ধি উদয় হোক। চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র নসাৎ হোক।
লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক