বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৭:২৪ অপরাহ্ণ, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬
ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা যুক্তরাজ্যের ডিপি রেলের। প্রতিষ্ঠানটির জনবল মাত্র ১১। আর পরিশোধিত মূলধন ১০০ পাউন্ড, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার টাকা। রেলপথ নির্মাণের কোনো অভিজ্ঞতাও এখন পর্যন্ত নেই ডিপি রেলের। যদিও ভুঁইফোড় এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ৭৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির নকশা প্রণয়ন, অর্থায়ন, লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে ডিপি রেল। নির্মাণকাজে সহযোগিতা করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসি)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর লন্ডনে কোম্পানিজ হাউজে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ঢাকা-পায়রা রেল লিমিটেড (ডিপি রেল), যার নিবন্ধন নম্বর ০৮৮২০৯৭৩। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দশমিক শূন্য ১ পাউন্ড বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ টাকার সমান। মোট ১১ জনবলের মধ্যে একজন কোম্পানি সচিব হিসেবে নিযুক্ত। বাকিরা সবাই পরিচালক। তাদের বেশির ভাগেরই নিয়োগ ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল ও তার পরে।
পরিচালকদের মধ্যে আনিসুজ্জামান চৌধুরী নামে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতও রয়েছেন। অন্যরা ব্রিটিশ নাগরিক। তারা হলেন— চার্লস ককবার্ন, পিটার আইলস, ইয়ান ডার্বিশায়ার, ম্যাট স্টেইনার, ডরিয়ান বেকার, বিল রবার্টস, জুলিয়ান লিন্ডফিল্ড, টিম মিডোস স্মিথ, গ্রাহাম লরেন্স ও পল টুইডাল। ব্রিটেনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে জানা যায়, এদের কারোরই ভালো কোনো ব্যবসায়িক বা পেশাদারিত্ব প্রোফাইল নেই।
তিন বছর বয়সী ডিপি রেলের ব্রিটেনে কোনো কর্মকাণ্ড নেই। প্রতিষ্ঠানটিকে তাই কার্যক্রমহীন বা ডরম্যান্ট কোম্পানি হিসেবে মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান এনডোলে। তারা বলছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের মধ্যে পাঁচজন সক্রিয়। এছাড়া একজন সক্রিয় কোম্পানি সচিব রয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ডিপি রেলের আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, এ দুই বছরই কোম্পানির মূলধন ১০০ পাউন্ডে অপরিবর্তিত রয়েছে।
পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ এ এলাকা ঘিরে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-পায়রা রেলপথ প্রকল্পটিও তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কী যোগ্যতার ভিত্তিতে ডিপি রেলকে কাজ দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, কাজ শুধু ডিপি রেলকে দেয়া হয়নি। তাদের সঙ্গে রয়েছে রেললাইন নির্মাণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান চীনের সিআরসি। মূলত তারাই (সিআরসি) নির্মাণকাজ করবে। অর্থ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে ডিপি রেল।
নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এত বড় প্রকল্প আনকোরা কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানোর প্রশ্নই আসে না। আমার বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডিপি রেলের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাচাই-বাছাই করেই সমঝোতা চুক্তি করেছেন।
জানা গেছে, ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণে গত বছর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন জিটুজি ভিত্তিতে ও ডিপি রেল পিপিপি ভিত্তিতে রেলপথটি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিপি রেলের বিপরীতে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি)
ইস্যুর সুপারিশ করা হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নামসর্বস্ব কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে রেলওয়ে।
২৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ডলার। এ হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার বা প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা। যদিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বৈদ্যুতিক সিঙ্গেল ট্র্যাকের লাইন, সিগন্যালিং ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২৩ কোটি থেকে ৩১ কোটি টাকা। যদি তা ডিজেল ইঞ্জিনের ২৫ টন এক্সেল লোডের সিঙ্গেল ট্র্যাক হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয় ৬ কোটি টাকার মতো। আর সিগন্যালিংয়ের জন্য খরচ হয় আড়াই কোটি টাকার বেশি।
ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে পারব না। এটা তো প্রাথমিক চুক্তি। তাদের ১৮ মাস সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা নকশা ও সমীক্ষা করবে। তারপর চূড়ান্ত চুক্তি হবে। তখন বিষয়টি জানা যাবে।
ডিপি রেলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ২০২৪ সাল নাগাদ রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এ রেলপথ দিয়ে বছরে প্রায় ২০ লাখ ইউনিট কনটেইনার পরিবহন করা সম্ভব হবে। তবে রেলপথটি নির্মাণে কোনো ধরনের সমীক্ষা করা হয়নি এখনো। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আগেই সমঝোতা হয়েছে ডিপি রেলের সঙ্গে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্যই তাদের সঙ্গে এ চুক্তি করা হয়েছে। সমীক্ষার পর তারা যে নকশা প্রণয়ন করবে, তার ভিত্তিতে ডিপি রেলের মাধ্যমেই কাজটি করা হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে সিঙ্গেল লাইন নির্মাণ করা হবে। তবে ডাবল লাইন নির্মাণের সুযোগ রাখা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে রাখা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পায়রা বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হলে কনটেইনার পরিবহনের চাহিদা বাড়লে রেলপথটি ডাবল লাইনে রূপান্তর করা যাবে। সূত্র: বনিক বার্তা