৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

শিরোনাম

বরিশালে লঞ্চে যাত্রী পরিবহনে স্বেচ্ছাচারিতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বরিশাল: কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে এবারো বরিশালে লঞ্চ যাত্রীদের ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বসার স্থান ও বিশুদ্ধ পানি সরবারহ ছিল অপ্রতুল। ডেকের সিট কিনতে হয়েছে যাত্রীদের। এরসাথে ধারণ ক্ষমতার তিন থেকে চারগুন বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়ায় অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে যাত্রা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তবে জেলা প্রশাসক বললেন, সমন্বয়হীনতা নয়; আন্তরিক হয়ে কাজ করেছেন বলে এবছর এখন পর্যন্ত নদী পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। বন্দর কর্মকর্তার দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০০৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঈদ যাত্রী ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বরিশালে নদী বন্দর কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, নৌ-পুলিশ, নগর পুলিশ, ডিজি শিপিং, লঞ্চ মালিক সমিতি ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি থাকেন সমন্বয় সাধনে।

 

বরিশাল নদী বন্দর থেকে তিন লাখের মত ঈদে যাত্রী আসা যাওয়া করায় সে হিসেব অনুযায়ী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়ে ১২ তারিখ পর্যন্ত চলেছে। আর কর্মস্থলে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ১৫ টু ১৭ তারিখ রাখা হলেও যাত্রীর চাপ থাকায় ২৪ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিবেচনা করা হয়। এই দপ্তর থেকে আরো জানা গেছে, ঈদুল আজহায় যাত্রী সেবায় ৩০ জন আনসার, নৌ-পুলিশ ৫০ জন, রোভার স্কাউটের ৫০ জন সদস্য, ডেক এন্ড ইঞ্জিন পার্সনেল ট্রেনিং সেন্টারের ৩০ জন ক্যাডেট ও নগর পুলিশের প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে এই দপ্তরের ২২৯২ নম্বর স্মারকে ৫ সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়। যাত্রী সেবায় চিকিৎসকও চাওয়া হয় সিভিল সার্জনের কাছে।

 

তবে রীতিমত এদের উপস্থিতি ছিল না বলে জানান নাম গোপন রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা। ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের সময় পেড়িয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার দিনে পঞ্চাশ হাজারাধিক যাত্রী বরিশাল নদী বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। জেসমিন অক্তার নামে এক যাত্রী জানান, বরিশাল নৌ-বন্দরে টিকিট কেটে প্রবেশের পর থেকেই বিড়ম্বনার শুরু। বসার কোন স্থান নেই বলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর কোন লঞ্চে যাবেন সেই লঞ্চ ঘাটের কোন স্থানে আছে, এর কোন নির্দেশনা নেই। পন্টুনে স্থান না পেয়ে লঞ্চের পেছনেরও লঞ্চ নোঙর করে আছে। এতে করে কেবিনের টিকিট করা লঞ্চ খুঁজতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে।

রাইসুল ইসলাম নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, পন্টুনে ঢোকার পথে এবার কোন যাত্রী বা তার ব্যাগেজ কেউ চেক করেননি। হাজার হাজার যাত্রী তাদের জন্য একটি মাত্র ট্যাঙ্কি রাখা আছে পানি নেওয়ার জন্য। প্রতি গেটে একটি করে পানির ট্যাঙ্ক রাখা হলে যাত্রীদের এমন বেগ পেতে হতো না। এদিন ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রী বোঝাই হয় ঘাটে থাকে ১৪টি লঞ্চ। তারপরও কোন কোন লঞ্চে ছাদ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হওয়ার পরও লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা না কারায় ক্ষুব্ধ যাত্রী লোকমান হোসেন বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের যোগসাজশ থাকায় বাড়তি লাভের আশায় এমনটা করছেন।

 

কীর্তনখোলা নেভিগেশনের পরিচালক রিয়াজুল করিম যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় লঞ্চ ছাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তিনি অভিযোগ তোলেন জেলা প্রশাসনের দেওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার প্রতি। রিয়াজুল বলেন, যেসব লঞ্চের অবকাঠামো নাজুক তারা যাত্রী বোঝাই হলেও বৃহৎ লঞ্চগুলো আগেভাগেই ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করায় ইদুল ফিতরের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বারা নাজেহাল হতে হয়েছে তাকে। নদী বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর তাদের সঙ্গে সমন্বয় না করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগাম পন্টুন থেকে লঞ্চ ছেড়ে দেয়াতে পিছনে থাকা লঞ্চে ধাক্কা লাগে।

 

যাত্রী বোঝাই পারাবত-১, কালাম খান, কীর্তনখোলা-১ ও দ্বীপরাজ নামক বৃহৎ লঞ্চগুলো পন্টুনে আছড়ে পড়লে, তাদের ৪টি বোলার্ড ভেঙে যায়। এদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লঞ্চের ৩-৪ জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে পরে সমঝোতা করেন বলে জানান নৌ-পুলিশের এক কর্মকর্তা।

 

তবে ঈদুল ফিতরে সিভিল সার্জনের পাঠানো চিকিৎসক দায়িত্ব পালনে অনুপস্থিত থাকলেও এবার ১৭ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপরদিন থেকে নদী বন্দর এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর চিকিৎসক ডা. জয়নাল আবেদিনকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। দেশের চলমান উদ্বিগ্ন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের প্রধান অভিযোগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিলের বিষয়ে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, আর্চওয়ে গেট এবার তারা পাননি।

 

এটি ঢাকা থেকে বরাদ্দ হয়। তবে মেটাল ডিটেক্টর ছিল। আর নৌ-পুলিশ নতুন ইউনিট বলে তারা সবাই আন্তরিক হয়ে কাজ করেছেন যাত্রী নিরাপত্তায়। এতে করে নদী বন্দরে যাত্রীদের কোন সমস্যা হয়নি। লঞ্চে ধারণ ক্ষমতা লেখার চেয়ে ৪ গুন যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের সময় যাত্রীদের কথা বিবেচনায় এনে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। তবে লঞ্চের লোড লাইন অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই লঞ্চ ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছেন তারা। যাত্রীদের বসার স্থানের অভিযোগ নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ফেরার পথে যাত্রীরা সরাসরি লঞ্চে ওঠেন বলে এক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হয়নি।

 

জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান জানান, তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন কালে দুর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছেন। যার কারণে বরিশালে কোন দুর্ঘটনা ব্যতীত নিরাপদে নদী পথের যাত্রীরা ঈদ পরবর্তীতে কর্মস্থলে ফিরতে পেরেছেন। আর যাত্রী ব্যবস্থাপনা কমিটির বেলায় কোন সমন্বয়হীনতা ছিল না। তবে লঞ্চের ফিটনেস আর যাত্রী ধারণ ক্ষমতার বিষয়টি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দেখভালের বিষয়। তারা শুধু দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে কিনা সে বিষয়টি দেখেছেন।

24 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন