গোটা দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর এলাকায় সন্ধ্যা নদীতে মেজর এম এ জলিল (শিকারপুর) ও বাবুগঞ্জ এলাকায় সুগন্ধা নদীতে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতুতে দীর্ঘ ১৪ বছরের জ্বলেনি ল্যাম্পপোস্টের বাতি। অথচ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেনা।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুগুলো ব্যবহার করে পুরো দক্ষিনাঞ্চলের লোকজন যাতায়াত করে থাকে। উদ্বোধনের পর থেকেই সেতু দুটির রেলিংয়ের সঙ্গে আলো প্রতিফলক কাগজ (রিফ্লেক্ট কালার পেপার) লাগিয়েই দায়সাড়া কাজ চালানো হচ্ছে।
আলোর প্রতিফলনই রাতে পরিবহন চালকদের কাছে সেতুর অবস্থান নিশ্চিত করে। তা দেখেই যানবাহনগুলো অধিক ঝুঁকি নিয়ে রাতে সেতু পার হয়। রাতে যান চলাচলের জন্য আলোর কোন ব্যবস্থা ছাড়াই দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়ারিকা ও শিকারপুর সেতু দু’টি উদ্বোধন করা হয়েছিল।
বাতির ব্যবস্থা করতে উদ্বোধনের প্রায় এগার বছর পরে দোয়ারিকা ও শিকারপুর সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে ওই ল্যাম্পপোস্টগুলো স্থাপনের তিন বছর অতিবাহিত হলেও সেতু দুটিতে আজও জ্বলেনি বাতি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরিশালের সন্ধ্যা নদীর ওপর শিকারপুর সেতু এবং বাবুগঞ্জের সুগন্ধা নদীর ওপর দোয়ারিকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কুয়েতের অর্থ সহায়তায় চীনের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি’ সেতু দু’টির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে।
১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রায় ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ৩৯০ মিটার দীর্ঘ দোয়ারিকা সেতু ও ২৯২ মিটার দীর্ঘ শিকারপুর সেতু। দুটির অবস্থানও খুব কাছাকাছি। এর সঙ্গে রয়েছে আরো ১১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক।
কিন্তু পুরো এলাকায় কোনো বাতির ব্যবস্থা ছাড়াই ২০০৩ সালের ১২ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতু দু’টিতে যান চলাচল উদ্বোধন করেন। রাতে অন্ধকারে সেতু পারাপার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার আশংকা সত্যেও কর্তৃপক্ষ অর্থ স্বল্পতার অজুহাত তুলে সেতু দু’টিতে আলোর ব্যবস্থা করেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাবুগঞ্জের দোয়ারিকা ও উজিরপুরের শিকারপুর সেতুর সংযোগ সড়কের অনেক স্থানের মাটি সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেতুতে স্থাপিত ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো ঝুলে আছে বা ভেঙে পড়ে গেছে। কোনো কোনো বাতির অস্তিত্বই নেই।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নামলেই সেতু এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেতু এলাকা ফাঁকা থাকায় এবং বাতি না জ্বলায় সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারীরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হয়। মাঝে মধ্যে যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
তারা আরও জানিয়েছেন, সেতু দু’টিতে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
একাধিক পরিবহন চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেতুতে বাতি না থাকায় রাতে যানবাহন পারাপার নিয়ে চালকরা খুবই আতঙ্কে থাকেন। পাশাপাশি দুটি যানবাহন চলার সময় আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। তাছাড়া শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশায় সেতু পারাপারে চালকদের আরও বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তাপশ কুমার পালের নিকট সেতু দু’টির ল্যাম্পপোস্টের বাতি না জ্বলার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেতু দু’টিতে আলো জ্বালানোর জন্য অতি দ্রুত কাজ শুরু করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ইচলাদী টোলপ্লাজায় নতুন করে সিসি-ক্যামেরা স্থাপনের উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শিরোনামটাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর