বরিশাল শহরের রুপাতলী এলাকায় ওজোপাডিকোর ডাকবাংলোর কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযাগপত্র আদালতে জমা পড়েছে। মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জসিম উদ্দিন এই অভিযোগপত্র সম্প্রতি জমা দিয়েছেন। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- দুটি মামলার একটিতেও এজাহারনামী ছিলেন না বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মনির মোল্লা। তবে তিনি যে এই মাদক বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন সে অভিযোগ ছিল ঢের। শেষতক সেই বিষয়টি ডিবি পুলিশের তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকাশ প্রমাণ মিলেছে, অভিযুক্তের তালিকায় এসেছেন মনির মোল্লা।
এই দুটি মামলা তার সহযোগী বাকেরগঞ্জের মহেশপুর এলাকার মৃত শাজাহান মুন্সির ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম, হলতা গ্রামের শাজাহান সিরাজের ছেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে শামীম চৌধুরী, বরিশাল নগরীর ব্যাপ্টিশ মিশন রোড এলাকার মাইনুদ্দিনের ছেলে নাছির মোল্লা, শহরের ২৩ নম্বার ওয়ার্ডের আব্দুর রশিদ খানের ছেলে নাছির খান, বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে মো. মিলন, কক্সবাজারের দরগারছড়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সৈয়দ মোর্শেদুর রহমান, রামু উপজেলার রত্না বড়ুয়া, বাকেরগঞ্জের রুশনী গ্রামের চেরাগ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. আজিজুল হক, ঝালকাঠি সদরের চাদকাঠি গ্রামের ইমান হোসেন বিশ্বাসের স্ত্রী রেকসনা বেগম, দিনাজপুরের বিড়ল থানার আতিকুর রহমানের ছেলে আব্দুস সালাম, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার দরগাচড়া গ্রামের আলী আজগরের ছেলে জাহেদ হোসাইন এবং ময়মনসিং জেলার ফুলবাড়িয়া থানার হোসেন মুন্সির ছেলে মো. সোহেল। তাদের মধ্যে কনস্টেবলের ওপরে মাদক মামলা এছাড়াও পর্ণোগ্রফির অভিযোগ এসেছে। কারণ তার ব্যবহৃত মোবাইলে পুলিশ পর্ণোগ্রাফির ভিডিওচিত্র খুঁজে পেয়েছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে- অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলামকে চলতি বছরের ২১ সকালে শহরের রুপাতলী এলাকা থেকে ৫২ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি মতে আ’লীগ নেতা মনির মোল্লার নিয়ন্ত্রণে থাকা ওজোপাডিকোর ডাকবাংলোর একটি কক্ষ থেকে কামরুল ইসলাম ও পুলিশ কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে আটক রা হয়। ওই সময় তাদের কাছ থেকে আরও ৩০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় এসআই দেলোয়ার বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু দুটি মামলার একটিতেও আ’লীগ নেতা মনির মোল্লাকে আসামি করা হয়নি।
যে কারণে ওই সময়ে অভিযোগ উঠেছিল ৫ লাখ টাকা রফদফায় তিনি পুলিশের জাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া আটক সাইফুল ইসলামসহ সকলের ওই সময় আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন মাদকদ্রব্যগুলো আ’লীগ নেতা মনির মোল্লার। ফলে এই পুরো বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার লেখালেখিতে সরগরম হয়ে ওঠে বরিশাল। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছিল ডিবি পুলিশের অভিযান নিয়ে।
কিন্তু সেই ডিবি পুলিশই তদন্তে মনির মোল্লা সম্পর্কে যে সকল তথ্য উপাত্ত্ব পেয়েছে তা শুনছে অনেকেই হকচকিয়ে যাবেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের বলেছে- রুপাতলীর বাসিন্দা আ’লীগ নেতা মনির মোল্লা ওই তিনজনসহ আরও অনেককে তার মাদক বিক্রির কাজে ব্যবহার করছিলেন। বিক্রিত মাদকের টাকা থেকে একটি বড় অংশ তিনি নিতেন।
এই তথ্য ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন অভিযুক্ত ও মনির মোল্লার মোবাইল ফোনের কল এসএমএস বিশে¬ষণ করে নিশ্চিত হয়েছেন। এই বিষয়গুলো তিনি আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছেন। ফলে ধারনা করা হচ্ছে- এই অভিযোগের প্রেক্ষিত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে মহানগর আ’লীগের এই নেতার। অবশ্য আইন বিশেষজ্ঞরাও এই মামলা দুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বলছেন- ডিবি পুলিশের যে ভাবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েছে তাতে তার ফেঁসে যাওয়ার বিষয়টি অনুমেয়।
শিরোনামবরিশালের খবর