বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:২৯ অপরাহ্ণ, ১৩ নভেম্বর ২০১৬
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত সাত সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি’ আসামিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে তারা নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর রবিবার দুপুরে ওই সাত আসামির সন্ধান চেয়ে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।
নিখোঁজরা হলেন-২০১৩ সালে নলছিটি থানায় দায়ের হওয়ায় বিস্ফোরক মামলার আসামি ও উপজেলার নাচল মহল গ্রামের মাছুম বিল্লার ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র বাকি বিল্লাহ্, মান্নান খানের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলামের ছেলে ঢাকার নিউ মার্কেটের দর্জি কারিগর মো.সোহাগ, মো. ইউসুব আলীর ছেলে মো.যোবায়ের, আব্দুল রউফ মৃধার ছেলে মো. আবুল বাশার, মোকছেদ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও হায়দার আলীর ছেলে মিনহাজুল।
এ ব্যাপারে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) মো. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আসামিদের যাচাইবাছাই শেষে ৮ জনের মধ্যে সাতজনকে আমরা মুক্ত করে দিয়েছি। এক জনের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা থাকায় তাকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। গ্রেফতার কিংবা আটক করার অথরিটি হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কারাগারের বাইরে কী হয়েছে তা আমাদের জানার কথা না। আর এ বিষয়ে আমি কিছু জানিও না।’
জানা যায় ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট ঝালকাঠীতে একটি মাদ্রাসায় গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে এই ৮ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। সেসময় তাদের কাছ থেকে গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র, জঙ্গি বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ দাবি করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, অস্ত্র এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে প্রত্যেকের নামে ৩টি করে মামলা করে পুলিশ।
নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষে বাকিবিল্লাহর বড় বোন হাফছা বেগম জানান, ‘২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট নলছিটি থানার মোল্লারহাট ইউনিয়নের খাদেমুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা ও জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গেলে ঝালকাঠির তৎকালীন পুলিশ সুপার মজিদ আলি ও নলছিটি থানার ওসি মাসুদসহ একদল পুলিশ মসজিদ থেকে ৯ জনকে আটক করে। সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে (মামলা নং ১৩/২০১৩)। ওই মামলায় পুলিশের দেওয়া চার্জশিট অনুযায়ী আদালত একজনকে অব্যাহতি দেয়।’
তিনি আরও জানান, ‘বাকি ৮ আসামির বিরুদ্ধে ঝালকাঠীর আদালত সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতার মামলায় প্রত্যেককে চার বছরের সাজা এবং বাকি দুই মামলায় তাদের খালাস দেয়। পরবর্তীতে সাজা খাটার জন্যে ঝালকাঠী কারাগার থেকে তাদের বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
তারা এরপর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় চলতি বছরের ৭ অক্টোবর মো. মসিউর রহমান বাদে অন্য সাত জনকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করার নিদের্শ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের আদেশের কাগজপত্র বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালে গত ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় আটজনের মধ্যে সাতজনকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ মুক্তি দেন।
কিন্তু কারাগারের ফটক থেকে বের হয়ে আসা মাত্রই কারা ক্যাম্পাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে অবস্থান করা একটি কালো ও আর একটি মাইক্রোবাসে সাদা পোষাকের লোকজন ওই সাতজনকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে বের হয়ে যায়। এ সময়ে তারা (মুক্ত আসামিরা) ’ডিবি ডিবি পুলিশ’ বলে চিৎকার করেছে।’
পরবর্তীতে এই সাত বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা, মেট্রোপলিটন ডিবি কার্যালয়, ঝালকাঠী ডিবি, ঝালকাঠী কারাগার ও নলছিটি থানায় খোঁজ নিয়েও তাদের সন্ধান পাননি বলে তারা স্বজনরা।
এ বিষয়ে পরের দিন শুক্রবার বিকালে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় এক সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও দু’দিন পরও তাদের দেওয়া অভিযোগপত্রটি থানায় ডায়েরিভুক্ত করা হয়নি বলে দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে কারাগার ক্যাম্পাসের ভেতরে রাখা ২টি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া নিখোঁজ সন্তানদের সন্ধান পাওয়া ও ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রার্থনা জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাকিবিল্লাহ’র মা মাহমুদা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাকিবিল্লাহ’র ভাই মো. খাইরুল বাসার, মো. হাসান, বোন হাফসা, নুরুল ইসলামের পিতা আ. মন্নান খাঁন, বোন মাহিনুর, সোহাগের পিতা নুরুল ইসলাম ও কোরানের হাফেজ যোবায়ের পিতা মো. ইউসুফ প্রমুখ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার মো. আজাদ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম। রবিবার সকালে যোগদান করেছি। নিখোঁজ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিলে তা আমাকে অবহিত করা হতো। এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। তার পরেও বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
এদিকে বাকি বিল্লাহর ভাই খাইরুল বাসার ফোনে জানান সংবাদ সম্মেলনের কথা শুনে কোতোয়ালি মডেল থানায় রবিবার দুপুরের পর জিডি গ্রহণ করে। তবে জিডি গ্রহণ করার পরপরই থানা থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে ভুল হয়েছে বলে জিডির কাগজ রেখে দিয়েছে।