বরিশাল শহরের একটি হাসপাতালে রোকসেনা বেগম নামের এক রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের সময় পেটে গজ রেখেই সেলাই করেছেন বলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক বছর পর পুণরায় অস্ত্রোপচার করে সেই গজ বের করা হয়েছে।
ভুক্তোভুগী রোগী রোকসেনা বরগুনার আমতলীর গুলিশাখালী হালিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
রোকসেনার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোকসোনা ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অ্যাপেন্ডিসাইটিস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিকস ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (শেবাচিম) সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এম এস এম সারফুজ্জামান রুবেল তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের সময় রোকসেনার পেটের ভেতর গজ রেখে ওই চিকিৎসক সেলাই দেন।
রোকসেনার স্বজনেরা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান রোকসেনা। কিছুদিন পর থেকেই তিনি পেটে ব্যাথা অনুভব করেন। গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর প্রচণ্ড পেটের ব্যাথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে পুণরায় বরিশালের চিকিৎসক সারফুজ্জামান রুবেলের শরণাপন্ন হয়। তিনি সিটিস্ক্যান করার পরামর্শ দিয়ে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন।
পরে ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহানা আক্তারের অধীনে ভর্তি করা রোকসেনাকে। ওই হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের চিকিৎসক রেজওয়ানা রহিম চৌধুরী রোগী রোকসোনার পেটের ভেতর গজ রয়েছে বলে সিটিস্ক্যান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ সেপ্টেম্বর সহকারী অধ্যাপক শাহানা আকতার অস্ত্রোপচার করে রোগীর পেটের ভেতর থেকে গজ বের করেন। এ সময় পেটের ভেতর গজ পঁচে অন্ত্রে সংক্রমণের উপস্থিতি দেখা যায়। এ অবস্থা দেখে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল টিম গঠন করেন।
মেডিকেল টিমের প্রধান অধ্যাপক এইচ এম এ রউফ ও শাহানা আকতার পুণরায় অস্ত্রোপচার করে কলেস্টমি (বিকল্প পায়ূপথ) তৈরি এবং অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করেন।
এদিকে চিকিৎসার জন্য অর্থ সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে- রোগীর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তারা চিকিৎসক অধ্যাপক এ এম এস এম সারফুজ্জামান রুবেলের শাস্তি দাবি করেন।
রোকসেনার স্বামী মো. মাহবুব উল আলম বরিশালটাইমসকে বলেন, বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শাহানা আক্তারের শরণাপন্ন হই। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রোপচার শেষে আমার স্ত্রীর পেটের ভেতরের গজ বের করেন এবং অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করেন। চিকিৎসক সারফুজ্জামান রুবেলের গাফলতিতে আমার স্ত্রী এখন ঢাকার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছি। আমি ওই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সারফুজ্জামান রুবেল মুঠোফোনে বলেন, ‘অস্ত্রোপচার করেছি। অস্ত্রোপচার করার সময় পেটের ভেতর গজ থাকতে পারে। ওই রোগীর পরিবার চাইলে চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন করা হবে।’
বরিশাল অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন ডায়েবেটিক ও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আবু জাফর বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘চিকিৎসক সারফুজ্জামান রুবেল ওই রোগীর অপারেশন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে কি হয়েছে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত নয়।’
রোকসেনার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করার কথা স্বীকার করে চিকিৎসক শাহানা আক্তার সোমবার (০৮ জানুয়ারি) বরিশালটাইমসকে জানান, ‘চিকিৎসকের অসাবধানতার কারনে পেটে গজ ছিল। ওই রোগীর পেটের ভেতরে গজ পঁচে অন্ত্র ছিদ্র হয়েছে।
ওই অন্ত্রে অস্ত্রোপচার শেষে কলেস্টমি (বিকল্প পায়ূপথ) তৈরি করা হয়। রোগী রোকসেনা আমার তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
শিরোনামOther