বরিশাল জেলায় যেখানে জমি অধিগ্রহণ সেখানেই হালিমের উপস্থিতি। কখনো অফিসের প্রতিনিধি, কখনো অফিসের একাউটেন্ট আবার কখনো সার্ভেয়ার অর্থাৎ যেখানে যে ভাবে পরিচিত হলে সুবিধা হয় সেখানে সেভাবেই পরিচয় দিয়ে জমির মালিকদের আস্থা অর্জন করেন আইনজীবী সহকারী আব্দুল হালিম ওরফে দালাল হালিম।
কোন জমির অধিগ্রহণ করায় প্রক্রিয়া শুরু হলে অফিসের সোর্স ব্যবহার করে আব্দুল হালিম জমির মালিক পর্যন্ত পৌছে যায়। এল এ শাখার জারিকারক জাকির ও কয়েকজন সার্ভেয়ার ঘুষ গ্রহণের সুবিধার্থে হালিমকে ব্যবহার করছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
বিশেষ করে প্রকল্পের ৭ ধারা নোটিশ জারি হওয়ার পরই তৎপরতা বেড়ে যায় আব্দুল হালিমের। অভিযোগ রয়েছে নোটিশ নিয়ে জাকিরের সাথে হালিম বাড়ি বাড়িও চলে যান।
ক্ষেত্র বিশেষ সেখানে নিজেকে এল এ শাখার প্রধান হিসাবরক্ষক, কোথায়ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত জমির দলিল হাত করে। পরে ওইসব লোকজনের কাজ সে নিজে করে দিবে বলে জমির মালিকদের কাছ থেকে বায়না চুক্তির চেকও নিয়ে নেন।
সিংহভাগ টাকা সে নিয়ে বাকী টাকা অফিসে উপরি হিসাবে দেয়। হালিম তার সুবিদার্থে যাদের একাউন্ট বরিশালে নেই, তাদের বরিশাল একাউন্ট খুলে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে।
ইতোপূর্বে তার এহেন কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাক্তন এলএও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় সরকার তাকে অফিস এলাকায় দেখা গেলে আটক করার হুমকি দিয়ে অফিস ত্যাগে বাধ্য করেন। এর পর থেকে এই হালিম এলএ শাখায় না গেলেও নিচতলায় বসে অফিসের সোর্সকে ব্যবহার করে তার কাজ চালিয়ে যান।
পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট সুখময় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বদলী হলেও দালাল হালিম অফিসে ঘোষণা দেয় যে সে তাকে (সুখময়) বদলী করিয়েছে।
সুখময় যাওয়ার পর পূণরায় সে বীরদর্পে অফিসে প্রবেশ করে। তাকে সাদরে গ্রহণ করে অতিরিক্ত এলএও পরিতোষসহ সার্ভেয়ার হানিফ ফোরাকান ও সিরাজ।
বর্তমান এলএও আহসান মাহমুদ রাসেল দালাল হালিমের বিষয়টি অবগত হয়ে তাকে অফিসে ডুকতে পুনঃরায় বারন করেন। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে এলএ শাখার স্টাফদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে। সে বলে বেড়ায় তাকে অফিসে ঢুকতে না দিলে দুদকে তার লোক আছে।
তাদের দিয়ে এলএ শাখার সকল কাজ বন্ধ করে দিবে। দালাল হালিম ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আবেদনের পাশে নিজের নাম লিখে রাখে যাতে অন্য কেউ তার মাধ্যমে ছাড়া কাজ করাতে না পারে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে অফিসে এক কর্মচারী জানান, হালিম পার্টির কাছ থেকে সে হারে টাকা গ্রহণ করে তাতে ডিসি এডিসি ও এলএও’র মানহানীর মত ঘটনা ঘটছে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাও সঠিক ভাবে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না।
হালিম তার সুবিধার্থে অতিরিক্ত এলএও পরিতোষের মাধ্যমে তার জামাতাকে ওমেদার হিসাবে শিক্ষা ও আইসিটি শাখায় নিয়োগ দেন। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ব্যক্তিগত পিয়ন রাসেল ও নজরুলের মাধ্যমে অফিসের তথ্য সংগ্রহ করে।
এবিষয় অতিরিক্ত এলএও পরিতোষ জানান, হালিম মূলত মুহুরি ক্ষতিগ্রস্তদের কাগজ সঠিক করে দেয়। তবে সে অফিসের কেউ না। কি ভাবে সে অফিসে দালালি করে তা তিনি জানেন না বলে জানান। শতকরা ২০ টাকা নেওয়ার বিষয় তিনি এড়িয়ে যান।
জারিকারক জাকির তাকে নিয়ে পার্টির সাথে পরিচয় করিয়া দেওয়ার বিষয় বলেন, আমি তাকে চিনি তবে সাথে নেই না, তবে সে নিজেই পার্টির কাছে যায় বলে সে শুনেছেন বলে জানান।
এ বিষয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি নতুন এসেছি দালাল হালিমের বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হালিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা আগে কাজ করতাম, এখন করি না। তবে শতকরা ২০ টাকা এর বিষয় জানতে চাইলে তিনি হাসির ছলে এড়িয়ে যান।
যদিও তিনি যে এসব ঘটনায় সম্পৃক্ত তা আপালচারিতায় আভাস পাওয়া গেছে।’’
বরিশালের খবর