বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কে নৈরাজ্য থামছেই না
জিয়াউল হক বাকেরগঞ্জ, বরিশাল:: বরিশাল পটুয়াখালী বাকেরগঞ্জ মহাসড়কে গণপরিবহনে চরম নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। এই নৈরাজ্যের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন খাত। ভাড়া নৈরাজ্য, যানজট, রাস্তায় বাস টার্মিনাল বানানোসহ নানা কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন উপজেলাবাসিসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ।
এই দুঃসহ যন্ত্রণা যেন দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। সড়কে যানবাহনের চলাচল ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায় আসেনি। কখনো কখনো ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে লাঠি হাতে পরিবহন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হয়।
কোন কোন সময় যানজট দীর্ঘ হলে ট্রাফিক পুলিশকে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় কোনো প্রকার পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে মূল সড়কে যত্রতত্র যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়।
সেই সমস্যা সমাধানে সকল যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করে পার্কিং ব্যবস্থা করা উদ্যোগ নেই কারো। আর এসব কারনে প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ বরগুনা সড়কে কালিগঞ্জ বাজার ব্রীজের ঢালে সড়কের মোড়ে শ্রাবণী নামের একটি যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার পরে ঐ স্থানে সড়কের উপরেই বাসটিকে প্রায় ৬ মাস রেখে দিয়েছে বাস মালিক।
অথচ সড়ক থেকে সরিয়ে পার্কিং ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনচিত্র বলে দেয় সড়কে নৈরাজ্য কায়েম করেছে। পদ্মাসেতু চালুর পর থেকে সড়কে পরিবহনের চাপ বেরেছে বহুগুণ।
সেই সাথে সড়ক থেকে স্পিড ব্রেকার তুলে নিয়েছে রোড এন্ড হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ। সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। পরিবহন
বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছে চালকেরা।
অপরদিকে সম্প্রতি সরকারি বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা ৬ যাত্রীর নিহত দুর্ঘটনার ঘাতক বসটি ডাকবাংলোর সামনে পার্কিং করে রাখা হয়েছে উপজেলা শহরের প্রধান সড়কের মাঝখানে।
সরু সড়কে যত্রতত্র এভাবে বাস গাড়ি পার্কিং করে রাখায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে। বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা জানান, গণপরিবহনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে এই খাতে শৃঙ্খলা আসবে না।
এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকা- হয়ে থাকে। তাদের নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন সাধারণ মানুষ। কাজের কাজ কিছুই হয় না কারন প্রশাসন নিরব।
জানা যায়, বরিশাল পটুয়াখালী সড়কে বাকেরগঞ্জ বিভিন্ন এলাকায় চলছে অগণিত ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব রিকশা শুধু গলির রাস্তাগুলোতেই যানজট সৃষ্টি করছে না মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টিক করে আসছে।
মাঝেমধ্যে এসব রিকশা প্রধান সড়কে এসে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। বাকেরগঞ্জ নিয়মিত মাসিক চাঁদার ভিত্তিতে চলছে এসব বাহন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু ব্যাটারিচালিত রিকশা মামলা দিয়ে থানায় পাঠালেও বিভিন্ন তদবির বানিজ্যে ছাড় পেয়ে যায় তারা।
বাকেরগঞ্জ শ্রীমন্ত নদীর উপর দাড়িয়ে শহরের চারিদিকে তাকালেই চিত্র দেখা যায় অপরিকল্পিত শহর ও চারদিকে দখলের দৌরাত্ম্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সড়ক থেকে অবৈধ দোকানপাট ও ধীরগতির যানবাহন উচ্ছেদ করতে গেলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা তৎপর হয়ে উঠে। স্থানীয় প্রশাসনও নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিস্ক্রিয় হয়ে থাকে।
দেখা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কারণগুলো দূর করার ক্ষেত্রে রাজনীতি অন্যতম বাঁধা হয়ে রয়েছে। রাজনীতির কারণে সরকারও কঠোর হতে পারছে না। কারণ, এই অপরাজনীতির সাথে সরকারেরই লোকজন বেশি জড়িত।
অর্থাৎ সর্ষের মধ্যেই ভূত বসবাস করছে। এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে না। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটবে, মানুষ নিহত-আহত হবে, তাদের পরিবার নিঃস্ব হবে।
সম্প্রতি বরিশাল পটুয়াখালী সড়কের বাকেরগঞ্জ হেলিপ্যাড সংলগ্ন রোডে বিআরটিসি’এর বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা চালকসহ ৬ জনের মৃত্যু ঘটে, বাকেরগঞ্জের কলসকাঠীর নারঙ্গলের হারুন মিনার মেয়ে সাথী আক্তার (২২), তার দেড় বছরের মেয়ে ফারজানা, সাথী আক্তারের বোন তানজিলা আক্তার একটি পরিবার নিঃশেষ হয়ে গেল।
আমরা শুধু খবরটি শুনে আফসোস করছি। এসব পরিবারের খোজ খবর কেউ রাখি না। আমরা তাদের কথা ভাবছি না। আমরা ভাবতে চাই না। ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাই না। এক সময় এই ভাবনা থেকে সরে যাই।
ভাবতে ভাল লাগে না। দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। কেন ঘটছে, তার কারণ সবারই জানা। সড়কে চালকদের বেপরোয়া আচরণ, অদক্ষ চালক, অসচেতনতা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সড়কের দুর্দশা, ধীরগতির অবৈধ যানবাহন ইত্যাদি নানা কারণ চিহ্নিত হয়ে আছে।
এ কারণগুলোর সমাধান করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যেত। অপরদিকে যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে, তাদের একটা শ্রেণীও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় মনুষ্যসৃষ্ট এক ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পরিবার ও সমাজ অস্থির হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সড়কে অপরাধ। মহাসড়কগুলো যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এসব কারণ দূর করা যায়, ঠেকানো যায়, যদি সংশ্লিষ্টরা সচেতন হন, দুর্ঘটনার কারণগুলো দূর করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, বড় ধরনের কোন ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটলেই আমরা কেবল তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ থেকে শুরু করে কারণ ও প্রতিকার নিয়ে মেতে উঠি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও নড়েচড়ে বসে। কিছুদিন গেলেই তা ভুলে যায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বড় ধরনের ট্রাজিক ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালককে শাস্তি দিতে গেলে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে।
সড়ক থেকে অবৈধ দখল ও ধীরগতির যানবাহন উচ্ছেদ করতে গেলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা তৎপর হয়ে উঠে। স্থানীয় প্রশাসনও নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিস্ক্রিয় হয়ে থাকে।
দেখা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কারণগুলো দূর করার ক্ষেত্রে রাজনীতি অন্যতম বাধা হয়ে রয়েছে। রাজনীতির কারণে সরকারও কঠোর হতে পারছে না। কারণ, এই অপরাজনীতির সাথে সরকারেরই লোকজন বেশি জড়িত।
অর্থাৎ সর্ষের মধ্যেই ভূত বসবাস করছে। এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে না। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সড়কের মধ্যে কোনো স্ট্যান্ড তৈরি করা যাবে না। সড়কে সকল প্রকার চাঁদাবাজি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
বরিশালের খবর, বিভাগের খবর