বরিশাল আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিসে ৭১.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হন। এমনকি পাসপোর্ট অফিসের সেবায় নির্ধারিত ফি’র বাইরে ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভূত অর্থ দেওয়ার গড় ১ হাজার ৮৫৪ টাকা। যে কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলা শাখা।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বরিশালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি মিলনায়তনে টিআইবি’র স্থানীয় সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল শাখা পরিচালিত ‘বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিস’ পাসপোর্ট সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আলী হোসেন।
তিনি বলেন, ‘গবেষণায় নভেম্বর ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০১৭ সময়ের মধ্যে বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের মোট ৩৫০ জন সেবাগ্রহীতার ওপর পরিচালিত একটি প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ ব্যবহৃত হয়েছে। এতে তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার, দলগত আলোচনা, কেস স্টাডি ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিসহ পাসপোর্ট সেবা বিষয়ক প্রবন্ধ, গবেষণা প্রতিবেদন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করা হয়েছে।’
বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের সেবায় বিদ্যমান অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতি চিহ্নিত করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়। এক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট আবেদনে সেবাগ্রহীতাদের ৮৯.৪ শতাংশ পুলিশি তদন্তে জনপ্রতি গড়ে ৮৯৬ টাকা ঘুষ দিয়েছেন।
গবেষণা অনুযায়ী জরিপের আওতাভুক্ত পাসপোর্ট বিতরণে ৩২.৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতা নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট পাননি। সেবাগ্রহীতাদের ৫৬.৩ শতাংশ দালাল বা অন্যের সহযোগিতা নিয়েছে। পাসপোর্ট প্রার্থীদের কাছ থেকে দালালরা যে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে তার একটি অংশ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এসবি পুলিশকে দেওয়া হয় বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়।
দালালের সহায়তা নেওয়ার কারণ হিসাবে সেবাগ্রহীতাদের ৭২.১ শতাংশ বিভিন্ন ঝামেলা ও ভোগান্তি এড়িয়ে চলা, ৬২.৯ শতাংশ দালালের সহযোগিতা ছাড়া আবেদনপত্র জমা দিলে কর্তৃপক্ষের জমা না নেওয়া, ৩৬.৫ শতাংশ নিয়মকানুন সম্পর্কে না জানা, ১১.৭ শতাংশ নির্ধারিত সময়ের আগে বা দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়া, ৬.১ শতাংশ পুলিশি তদন্তে হয়রানি এড়ানো এবং ৪.৬ শতাংশ সময়ের অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।
এ অবস্থা উন্নয়নের জন্য করা ১৩ দফা সুপারিশের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিধান বাতিল, দালাল চক্রের দোসর অসাধু কর্মচারীদের শাস্তির আওতায় আনা, আবেদনপত্র জমাদান, প্রি-এনরোলমেন্ট, বায়ো-এনরোলমেন্ট ও বিতরণ কাউন্টারে অফিস চলাকালীন সময়ে কর্মরত জনবলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, আবেদনপত্র সত্যায়ন ও প্রত্যায়নের বিধান বাতিল ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন, সনাক সদস্য প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মানবেন্দ্র বটব্যাল, প্রফেসর শাহ সাজেদা এবং টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহনূর রহমান প্রমুখ।
এই গবেষণা প্রতিবেদন বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিসের উপ-পরিচালক কামাল হোসেন খন্দকার বলেন, ‘আমি গত ২৩ এপ্রিল এখানে যোগদান করেছি। জরিপটি করা হয়েছে এর আগে।
তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। দফতরে কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ আমি পাইনি। কোনও অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিরোনামবরিশালের খবর