বরিশাল নগরীর ফলপট্টিতে সহপাঠীর ক্রিকেট ব্যাটের আঘাতে আবির রবি দাস (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। শনিবার খুব ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্কুলছাত্র মারা যায়। ওই স্কুলছাত্র শহরের ফলপট্টি এলাকার জয় দাসের ছেলে। এবং আছমত আলী খান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলো। সে এ বছর ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে- শুক্রবার বিকেলে ফলপট্টি এলাকার সাততলা ভবনের সম্মুখ মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়ে আবিরের সাথে তার সহপাঠী মিরাজ হাওলাদারের দ্বন্দ্ব হয়।
ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মিরাজ বাসার সামনে ফলপট্টি মন্দির লাগোয়া রোডে আবিরের মাথায় খেলার ব্যাট দিয়ে স্বজোরে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে সড়কের ওপরে লুটিয়ে পড়ে আবির। ওই সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতেই বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে গভীর রাতে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকার হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর রাতে মারা যায় আবির রবি দাস।
শনিবার বিকেল ৩টার দিকে আবিরের মরদেহ স্বজনেরা বরিশাল নিয়ে আসলেও পুলিশ বাসায় যেতে দেয়নি। নথুল্লাবাদ এলাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে লাশ পাঠিয়ে দেয় শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে। নিশ্চিত হওয়া গেছে- হামলাকারী মিরাজ একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল হাওলাদারের ছেলে মিরাজ। এই মিরাজও আছমত আলী খান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অর্থাৎ আবিরের সহপাঠী। তারা দুজন এবার এক সাথে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক এইচ এম জসিম উদ্দিন। তবে এই হত্যাকান্ডের পর থেকে পলাতক রয়েছে মিরাজ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি পুলিশের একাধিক টিম তাকে গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে। কিন্তু শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তারে কোন খবর দিতে পারেনি। এদিকে পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন আবিরের পিতা ও মাতা। পাশপাশি স্থানীয়রাও শোকে কাতর। তবে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন অনেকে। বিশেষ করে আবিরের খুনি মিরাজকে গ্রেপ্তার দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি তুলেছেন তারা। ফলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এমতাবস্থায় ফলপট্টিতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে শনিবার সকালে আবির মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ মো. আওলাদ হোসেন মামুন। তিনি শনিবার রাত ১২টার খবরে সর্বশেষ দৈনিক প্রথম সকালকে জানিয়েছেন- অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
কিন্তু ঘটনার পরপরই আত্মগোপন করেছে। যে কারণে খুঁজে বের করতে সময় লাগছে। এদিকে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও থানায় কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে অভিযোগ নিয়ে আসলে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ওসি।
এই বাস্তবতায় স্থানীয়রা বলছে- আবিরের পরিবারের পুরোপুরি শোকাক্রান্ত। যে কারণে অভিযোগ বা মামলার বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে এখন ছেলের মরদেহের অপেক্ষা করছে। তবে মরদেহ অন্ত্যোষ্টেক্রিয়া শেষ হওয়ার পরপরই তারা মামলার বিষয়টি নিয়ে ভাববে বলে দাবি করা হচ্ছে।’’
শিরোনামবরিশালের খবর