বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
অগ্নিকান্ড থেকে যান-মাল রক্ষায় বরিশালের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে একাধিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে এসব স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও রহস্যজনক কারণে তা চালু হচ্ছে না।
অথচ কোন কোনটায় জনবল নিয়োগ এবং যানবাহন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরিশাল বিভাগে এমন ৭টি ফায়ার স্টেশনের কাজ শেষ হলেও সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তবে এই কারণে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এবং গণপূর্ত বিভাগ একে অপরকে দোষারোপ করেছে। এমন বাস্তবতায় নিমার্ণ কাজ শেষ হলেও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু না হওয়ায় উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। বরিশাল ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে ৩০টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে।
তার মধ্যে বরিশাল জেলায় ৬টি। গত কয়েক বছর আগে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ওইসব ফায়ার স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। জনবল ও যানবাহনও বরাদ্দ দিয়েছে প্রধান কার্যালয়। কিন্তু দুইটি সরকারি দপ্তরের উদাসীনায় ঠিকাদাররাও এর সুযোগ নিচ্ছেন। এমতাবস্থায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জে দুই বছর আগে ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৬ মাস পূর্বে ওই স্টেশনের জন্য গাড়ী বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরও চালু হচ্ছে না এ স্টেশনটি। যে কারণে গত গত ১২ জুন গভীর রাতে উপজেলার রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সামনের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়টি দোকান ভস্মীভূত হয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়। এই ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, এ উপজেলার ফায়ার সার্ভিসটি চালু থাকলে এ ক্ষতি থেকে অন্তত রক্ষা পাওয়ার সম্ভবনা ছিল। বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম খালেদ হোসেন স্বপন বলেন, তিনি সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি তুলেছিলেন।
কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে আশানুরূপ উত্তর পাওয়া যায়নি। বাকেরগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের জন্য ৬ মাস পূর্বে ১৫ জন লোক নিয়োগ ও একটি গাড়ি বরাদ্দ হয়। কিন্তু স্টেশনটি হস্তান্তর না করার কারণে চালু হচ্ছে না। এছাড়া বরিশাল নগরীর কাশিপুরের বরিশাল দক্ষিণ ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিন তলা বিশিষ্ট এ স্টেশনটিও চালু হচ্ছে না। পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার নতুন ফায়ার স্টেশনও অজ্ঞাত কারণে চালু হচ্ছে না।
তাছাড়া ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর ফায়ার স্টেশন গত এক বছর আগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত যানবাহনও এসেছে। কিন্তু স্টেশনটি চালু হচ্ছে না। একই অবস্থা বরগুনা জেলার বেতাগী ও বামনা উপজেলার নতুন ফায়ার স্টেশনগুলোর। এদিকে ভোলার তজুমদ্দিন ও মনপুরা উপজেলার দুইটি ফায়ার স্টেশন রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার কারণে চালু হওয়া এ ফায়ার স্টেশন দুইটিতে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
যে কারণে অনেকটা বেহাল অবস্থায় চলছে তজুমদ্দিন ও মনপুরার ফায়ার স্টেশন। এদিকে ঝালকাঠির নলছিটিতে বৃহৎ একটি গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অজোপাড়াগাওয়ে এত বড় গাড়ী রাস্তায় চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এই জেলার কাঠালিয়ায় ২য় কল গাড়ি চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় সেখানে এ কাজে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স’র উপ সহকারি পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, কাজ হস্তান্তর না হওয়ায় অনেক স্টেশন তারা চালু করতে পারছেন না।
অনেক স্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি, বাথরুম অসম্পন্ন, সীমানা প্রাচীরও দেয়া হয়নি। জনবল ও গাড়ি সংকটও রয়েছে। তাছাড় বাবুগঞ্জের কাজ ঠিকাদাররা কাজ শেষ করছে না। এই বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগকেও একাধিকবার চিঠি দিয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়ের ভাষ্য হচ্ছে- ফায়ার সাভিসের লোকবল নেই তাই তারা চালু করতে পারছে না। বরিশাল দক্ষিণ ফায়ার স্টেশনের নাম নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কিন্তু বাবুগঞ্জের স্টেশন ২০১৫ সালেই নির্মাণ শেষ হয়েছে। কেন ফায়ার সার্ভিস নিচ্ছে না তা তাদের জানা নেই। তবে বাকেরগঞ্জে বরাদ্দের অভাবে কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে।”