বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৬:২৪ অপরাহ্ণ, ০৭ নভেম্বর ২০১৬
বরিশাল রেঞ্জের পুলিশে পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে মাঠপর্যায়ের পুলিশে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দেশের অন্যান্য রেঞ্জে পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও বরিশাল রেঞ্জের আওতাধীন ৬ জেলার ক্ষেত্রে কেন তা আটকে আছে সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন কিংবা মন্ত্রণালয়ের কেউ। বরিশাল রেঞ্জে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ থাকা এসব পুলিশ সদস্যের পদোন্নতির বিষয়টি আগামী ৪ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত না হলে তাদের আবার পদোন্নতির পরীক্ষায় বসতে হবে। এর ফলে পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের টানা দু’বছর পিছিয়ে যেতে হবে।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে। বিষয়টি নিয়ে তারা গোপনে বিভিন্ন সংবাদপত্র কার্যালয় এবং সাংবাদিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
প্রতিবছরই পুলিশ প্রশাসনে পদোন্নতির পরীক্ষা হয়। পাস করার পর থেকে ১ বছর বহাল থাকে পদোন্নতির মেয়াদ। প্রতিবছর পাস করে বসে থাকা সদস্যদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে আবার পদোন্নতি পরীক্ষায় বসতে হয় তাদের। গেল বছর বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় পদোন্নতি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেন ১ হাজারের কিছু বেশি পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উত্তীর্ণ হন প্রায় ৪শ’ জন। বাকিরা অন্যান্য পদে।
নির্ধারিত সময়ে এদের পদোন্নতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে চিঠি পাঠানো হয় বরিশাল রেঞ্জ থেকে। অবশ্য কেবল বরিশাল নয়, দেশের অন্য ৫টি রেঞ্জ থেকেও একইভাবে চিঠি পাঠানো হয় ঢাকায়। এ ক্ষেত্রে দেশের ৮ম বিভাগ ময়মনসিংহের পদোন্নতির বিষয়টি সংযুক্ত করা হয় ঢাকা বিভাগের সঙ্গে।
বরিশালের পদোন্নতির প্রস্তাবসংক্রান্ত চিঠি পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তা অনুমোদন করে সচিব কমিটি। ১০ অক্টোবর ওই চিঠিতে স্বরাষ্ট্র সচিবের স্বাক্ষর এবং ১৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে ১৬ অক্টোবর পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২৯ অক্টোবর পদোন্নতির বিষয়টি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তা চূড়ান্ত আদেশ হিসেবে জারি হওয়ার জন্য আবার ফেরত যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে বিষয়টি আটকে আছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ইতিমধ্যে ৫টি রেঞ্জের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ঢাকা এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৪ হাজার ৫২৬, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ৩ হাজার ৫৯০, খুলনা রেঞ্জের ৩ হাজার ৪১৪, রাজশাহী রেঞ্জের ২ হাজার ৮১৭ এবং রংপুর রেঞ্জের ২ হাজার ৮১৪ জন পুলিশ সদস্য কেবল পদোন্নতি পাওয়াই নয়, রীতিমতো র্যাংক ব্যাজ পর্যন্ত ব্যবহার শুরু করেছেন। অথচ বরিশাল রেঞ্জের মাত্র ১ হাজার পুলিশ সদস্যের পদোন্নতির বিষয়টি আটকে আছে রহস্যজনক কারণে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, ‘পদোন্নতির জন্য নানামুখী তদবির করতে হয় পুলিশ প্রশাসন এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে। গেল বছর এ রকম তদন্ত আর ঘুষ তহবিল তৈরি করতে গিয়ে বরখাস্তসহ নানা দাফতরিক শাস্তির শিকার হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন উপ-পুলিশ কমিশনারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। যে কারণে এ বছর আর কোনো রকম তদবির বা কাউকে ম্যানেজের চেষ্টা করার সাহস পাইনি আমরা। আর এ কারণেই হয়তো আটকে গেল আমাদের পদোন্নতি।’
কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের পদোন্নতি পরীক্ষা। এর আগে যদি আমাদের পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যেত তাহলে ওই পরীক্ষায় আর বসতে হতো না আমাদের। কিন্তু যদি চূড়ান্ত না হয় তাহলে একবার পরীক্ষায় পাস করা সত্ত্বেও আবার আমাদের পদোন্নতি পরীক্ষায় বসতে হবে।’ পাস করা সত্ত্বেও কেন আবার পদোন্নতি পরীক্ষায় বসতে হবে- জানতে চাইলে বরিশালের পুলিশ বিভাগের একজন রিজার্ভ অফিসার বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পদোন্নতি নিশ্চিত না হলে ওই পাসের কোনো মূল্য থাকে না।
আবার নতুন করে বসতে হয় পদোন্নতি পরীক্ষায়। এ বছর যেহেতু এখনও পদোন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি তাই বাধ্য হয়েই এসব পুলিশ সদস্যকে আবার আগামী ১১ নভেম্বরের পদোন্নতি পরীক্ষায় বসতে হবে। এ ক্ষেত্রে পদোন্নতি প্রশ্নে টানা ২ বছর পিছিয়ে যাবে তারা।’ পদোন্নতি প্রশ্নে কোনো জটিলতা আছে কিনা- জানতে চাইলে বরিশাল রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘যথাসময়ে তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। যতদূর জানি, এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার।
এ ব্যাপারে বেশিকিছু আমার জানা নেই।’ বিষয়টি জানতে অন্যান্য রেঞ্জের পদোন্নতির চিঠিতে স্বাক্ষরকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আ. ওয়াহাব ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সব চিঠিতে আমি স্বাক্ষর করেছি তেমন নয়। যেগুলোর ক্ষেত্রে দাফতরিক সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে কেবল সেগুলোই চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।’ বরিশাল রেঞ্জের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখা দিয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’