বরিশাল: ২১ আগস্ট দিনভর টানা বর্ষণে বরিশাল সিটি কপোরেশন এলাকায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতি নির্ণয় করা হয়েছে ৪১৩ কোটি টাকা।
এই ক্ষয়-ক্ষতি শুধু নগরীর সড়কগুলোতে হয়েছে। গত ৪৮ বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড অতিক্রম করায় ওই দিন নগরীর কমপক্ষে অর্ধশত সড়কের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামল।
মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালের ১০ নভেম্বর বরিশালে সর্বশেষ ২০৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়। এরপর গত ২০ ও ২১ আগস্ট বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বরিশালে রেকর্ড পরিমাণ (২৭২ দশমিক ১মিলি মিটার) বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র ১৩ ঘন্টার ওই বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্যে সদর রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, বগুড়া রোড, নবগ্রাম রোড, মল্লিক রোড, কেডিসি রোড, নিউ সার্কুলার রোড, কালুশাহ সড়ক, স্ব-রোড, ভাটিখানা সড়ক, শায়েস্তাবাদ সড়ক, ধানগবেষণা রোড, নিউ হাউজ রোড, ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোড, অক্সফোর্ড মিশন রোড, গোরস্থান রোড, লেচুশাহ সড়ক, কলেজ রোড, বৈদ্যপাড়া সড়ক, কাজীপাড়া সড়ক, টিয়াখালী রোড, খালপাড় সড়ক, মসজিদ সড়ক, ইসলামপাড়া সড়ক, স্টেডিয়াম সড়ক, ওসমান খান সড়ক, কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড, সেকশন রোড, জুমির খান সড়ক, সিকদারপাড়া সড়ক, মুসলিমপাড়া সড়ক, বিআইপি সড়ক, পলাশপুর-রসুলপুরসহ বরিশাল মহানগরীর অধিকাংশ সড়ক দুই থেকে তিন ফুট পানিতে ডুবে যায়। এতে করে ওই দিন যানবাহন চলাচল বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি নগরীর নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়।
সিটি মেয়র জানান, অতি বর্ষণের ফলে প্রাথমিকভাবে ৪১৩ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি নির্ণয় করা হয়েছে। তবে এ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মেয়র কামাল আরো বলেন, মহানগরীর প্রায় ২৪৬ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং রাস্তা এবং নদীর তীরবর্তী ও বর্ধিত এলাকায় প্রায় ৪১ কিলোমিটার মাটির রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পুনর্নির্মাণ করতে প্রায় ৪১৩ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক অপ্রতুলতার কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব তহবিলের মাধ্যমে এ সকল রাস্তাসমূহ পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তাই জনস্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহ সংস্কার/ পুনর্নির্মানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ৪০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো সংস্কার/ পুনর্নির্মাণ কাজ করা হবে।
মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, দীর্ঘ দিন পুনঃখননের অভাবে এবং অবৈধ দখলের ফলে মহানগরীর বিদ্যমান ৪৬টি খাল ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে জেল খাল অবৈধ দখল মুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খালগুলো ও অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে। জেল খালসহ গুরুত্বপূর্ণ খালসমূহের পাড় সংরক্ষণ ও পুনঃখননের জন্য ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে খালসমূহ পুনঃখনন করা হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিসিসির প্রাক্তন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদার, প্যানেল মেয়র শহীদ তাসলিমা কামাল পলি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, প্রধান প্রকৌশলী খান মো. নূরুল ইসলাম, কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান হিরু, জিয়াউদ্দিন সিকদার প্রমুখ।
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর