উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ সরকার ঔপনিবেশিক বাংলায় রেলওয়ে স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে ইংল্যান্ডে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবহিকতায় দেশের বৃহত্তম রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যা দেশের জন্য এখনও গর্ব। এসব কথা বিবেচনায় নিয়ে বরিশাল থেকে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ ব্রিটিশ কোনো কোম্পানিকে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর কল্যাণে সরাসরি রেলপথ যাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পযর্ন্ত । এরপরে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পযর্ন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে সরকার। প্রথম ধাপে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পযর্ন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী জেলার পায়রা সমুদ্রবন্দর পযর্ন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল(পিডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়েছে।
পিডিপিপি অনুসারে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। চীন সরকারের নমনীয় ঋণ অথবা যেকোনো উন্নয়ন সহযোগী দেশের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পযর্ন্ত।
সম্প্রতি ‘কনস্ট্রাকশন অব ব্রডগেজ রেলওয়ে লাইন ফরম ভাঙ্গা টু বরিশাল ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ফর বরিশাল টু পায়রা সি-পোর্ট সেকশন’ শীর্ষক প্রকল্পের পিডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। চীন সরকার প্রকল্পে ঋণ দিতে চায়। চীনের ঠিকাদারের সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন।
এমওইউ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা কোনো চুক্তি স্বাক্ষর নয়। ব্রিটিশ কোনো কোম্পানিকে কাজ দিলে সমস্যা হবে না। ব্রিটিশ কোম্পানি রেলপথ নির্মাণে অনেক দক্ষ’।
পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল তার নিজ কক্ষে বলেন, ‘ব্রিটিশ কোম্পানি রেলপথ নির্মাণে অনেক দক্ষ। তাদের রেলপথ নির্মাণের কাজের মানও অনেক ভালো। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন’।
গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়িয়ে ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে সমন্বিত ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভারত থেকে আরও ৬০০টি বাস ও ৫০০টি ট্রাক কিনছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। এ লক্ষ্যে একনেক সভায় দু’টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিআরটিসি’র বাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিকল ও নষ্ট বাস মেরামত করে জনগণের সেবা বাড়াতে হবে। তবে যেসব বাস একবারে বিকল ও পুন:মেরামতের অযোগ্য সেসব বাস বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দিতে হবে’।
‘চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়িবাঁধ, প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন’ প্রকল্পটি ১ হাজার ১শ’ ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সময় দেশের বন্যা পরিস্থিতির কথা উঠে আসে একনেক সভায়।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত বরাদ্দের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুমোদিত ‘জামালপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জামালপুর নার্সিং কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৭১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় জামালপুর মেডিকেল ও নার্সিং কলেজে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক ও নার্স হতে পারলে স্থানীয় মানুষজনের চিকিৎসাসেবায় আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন। যেখানেই মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হবে, সেখানেই স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্থানীয় ডাক্তার ও নার্স বেশি থাকলে স্থানীয় মানুষ স্বাস্থ্যসেবা যেন আরও বেশি পেতে পারেন’।
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর