বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০১:৪৪ অপরাহ্ণ, ১৪ মার্চ ২০১৬
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত আমের চাহিদা বাড়ছে। ওয়ালমার্টসহ বিশ্বের সেরা চেইন সপগুলো বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ কারণে সরকার আম উৎপাদনে মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে চাষিদের আম উৎপাদনে আগ্রহী করতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিদেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত আমের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিকমুক্ত আম উৎপাদনে এবার সরকারিভাবে বাগান পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম পাকার পর তা গাছ থেকে নামানো পর্যন্ত বাগান তদারক করা হবে। একই সঙ্গে আমের উৎপাদন বাড়ানো, বাজারজাতকরণ, রপ্তানি এবং সংরক্ষণসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা দেবে সরকার। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গত বছর আম রপ্তানির পর ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আম নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে বাংলাদেশের আম বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকলেও শুধু উদ্যোগের অভাবে এতদিন বাংলাদেশের আম বিশ্ববাজারে তেমন পরিচিতি পায়নি।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের জনপ্রিয়তা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চেইন সপ ওয়ালমার্ট এ বছরও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি মৌসুমী ফল আমও আমদানি করবে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কাছে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চেইন সপটি যেকোনো পণ্যের গুণগত মানের দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হতে পারে, এমন কোনো পণ্য তারা তাদের চেইন সপগুলোতে বিক্রির জন্য রাখে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের আমবাগানগুলো পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলার প্রায় সব এলাকায় আছে বড় বড় আমবাগান। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমবাগানের সংখ্যাও বাড়ছে। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই শ জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ জেলাতেই আছে দুই হাজারের বেশি আমবাগান। তবে গড়ে ওঠা নতুন আমবাগানগুলো বনেদি জাতের। বিশেষ করে, নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতের গাছ বেশি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে দেশের বাগানগুলোর ৮০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। তবে এবার ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আ¤্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে। গাছের মুকুলকে কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষিরা। এ সময় চাষিরা যাতে বাগানগুলোতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে, সে বিষয়ে এরই মধ্যে তদারকি শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের চাহিদা বাড়ছে। এটি এখন রপ্তানি পণ্যে স্থান করে নিয়েছে। দেশেও মৌসুমী এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্যসম্মত এবং রাসায়নিকমুক্ত আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে চাষিদের সহযোগিতা করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর আমবাগান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।