বাউফলে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী’কে ধর্ষনের চেষ্টা
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর বাউফলে গভীর রাতে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে কেশবপুর ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী মোসাঃ রুবিনা আক্তার (১৯) নামে এক তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী’কে একই এলাকার মোঃ তানজিল হোসেন (২২) নামের এক যুবক তার কয়েক সহপার্টিদের নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় কোন ধরনের আইনি ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ওই কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার ( ২৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের গাজী বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় তানজিল ও তার পরিবারের ভয়ে কোন ধরনের আইনি সহায়তা নিতে পারছেনা ভুক্তভুগী রুবিনার পরিবার।
ধর্ষনের চেষ্টার ঘটনাটি ধামাপাচা দেয়ার জন্য উল্টো ওই তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী’র পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (৯ অক্টোবর ) সকালে স্থানীয় ও ভুক্তভোগী রুবিনার পরিবারে অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, প্রেমর সম্পর্কের সুত্র ধরে উভয় পরিবারের সমর্থনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ১৮ তারিখ উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের মোঃ দুলাল মৃধার ছেলে তানজিলের সাথে একই এলাকার আব্দুল মান্নান গাজীর কেশবপুর ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর পড়–য়া মেয়ে মোসাঃ রুবিনা আক্তারের সাথে স্থানীয় কাজি অফিসের মাধ্যমে বিয়ে হয়।
বিয়ের পরে রুবিনার পরিবার জামাতা হিসেবে তানজিলকে উপঢৌকন দিয়ে বেড়াতে নেয়। কয়েকদিন পরে চাকরির সুবাধে তানজিল ঢাকাতে চলে যায়। ওই থেকেই স্ত্রী রুবিনার সাথে তানজিল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং তানজিল ও তার পরিবার বিয়ের বিষয়টি
অস্বিকার করেন।
কয়েক মাস পরে তানজিল কাবিন বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা করে। এর পর তানজিলের পরিবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে বিয়ে বাতিলের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে গত ১৩ আগষ্ট একতরফা তালাক দিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা রুবিনার পরিবার কে বাধ্য করে। তালাকের পরে রুবিনা পিছনের সব কথা ভুলে গিয়ে নিয়মীত কলেজে যাওয়া শুরু করলে পুনরায় তানজিল রুবিনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কলেজে যাওয়া আসার পথে নানান ধরনের কথা বলে
উত্যক্ত করতে থাকে। এতে রুবিনা কোন কর্নপাত না করলে তানজিল ঘটনার দিন (২৯ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে রুবিনার ঘরের সিঁদ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে রুবিনার রুমে গিয়ে ঝপটে ধরে ধর্ষনের চেষ্টা করে।
এ সময় রুবিনার ডাক চিৎকারে ঘরের অন্যান্য লোকজন উঠলে তানজিল হোসেন ও তার সাথে থাকা সহপার্টিরা দৌরে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে বাড়ীর লোকজন তানজিলকে ধরে ফেলে।
এ সময় তানজিলের সাথে বাড়ীর লোকদের ধস্তাধস্তি ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তানজিল ছুটে দৌরে পালাবার চেষ্ট করলে পরে গিয়ে আহত হয়। পরে রুবিনার ভাই মোঃ কুদ্দুস গাজী পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে কল করলে বাউফল থানা পুলিশ তানজিলকে রুবিনার ঘর থেকে উদ্ধার করে।
পরে তানজিল অসুস্থ হলে বাউফল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে তানজিলের পরিবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে মামলা না করার জন্য রুবিনার পরিবারকে হুমকি দেয় এবং ঘটনাটি স্থানীয় ভাবে মিমাংশা করার কথা
বলে।
পরে তানজিলের পরিবার উল্ট মামলা করে রুবিনা সহ তার পরিবারের লোকদেরকে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন রুবিনার পরিবার। এব্যাপারে তানজিল হোসেন বলেন, রাতে বাহিরে নামলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমাকে ধরে নিয়ে তাদের ঘরে আটকিয়ে আমাকে মারধর করা হয়েছে।
আমি ধর্ষন করতে যাইনাই। আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ সত্য নয়। এব্যপারে রুবিনার ভাই মোঃ কুদ্দুস গাজী বলেন,তানজিল সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে আমার বোনকে ধর্ষন করার চেষ্টা করছিলো।
বোনের ডাকচিৎকারে আমরা তানজিলকে ধরে ফেলেছি। পরে পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে ফোনদিয়ে ঘটনাটি জানালে পুলিশ এসে তানজিলকে নিয়ে যায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার ঘটনাটি মিমাংশা করে দিবে বলে জানান।
এ ঘটনার ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধায় আমি বাউফল থানায় আসার পথে তানজিলের বাবা দুলাল মৃধার নেতৃত্বে কয়েকজন লোক নুরাইনপুর বাজারের উত্তর পাশে ইটের ভাটার মধ্যে ধরে নিয়ে আমাকে মারধর করে মামলা না করার জন্য হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বাউফল থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
বাউফল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এস আই) মোঃ নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, শুক্রবার ভোরে রুবিনার ভাই কুদ্দুস গাজীর ৯৯৯ নম্বরে অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমিসহ আরও কয়েক পুলিশ সদস্য মেয়ের ঘড় থেকে তানজিলকে উদ্ধার করি।
পরে তানজিল অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এব্যাপারে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আল মামুন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তানজিলকে উদ্ধার করে। তানজিল চিকিৎসা নিচ্ছে। রুবিনার পরিবারের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পটুয়াখালি, বিভাগের খবর