বাউফল জোড়া খুন: গেমসে অস্ত্র চালানো শিখে কিশোর গ্যাং
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঘাতক সেই কিশোর একাই সহপাঠী তিন শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে। তাতে গুরুতর আহত মারুফ হোসেন বাপ্পী এবং নাফিজ মোস্তফা আনছারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। উপজেলার ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২২ মার্চ এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘাতক ওই কিশোর ফ্রি ফায়ারসহ বিভিন্ন গেমস খেলে অস্ত্র চালানো শেখে। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে আসছিল সে। ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে প্রথমে রাজধানী ঢাকায়, পরে কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে নরসিংদীর রায়পুরায় এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে সে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ওই কিশোর অপরাধীসহ তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ২২ মার্চ বুধবার ক্লাসের বিরতির সময় নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরই মধ্যে নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে একজনের পক্ষ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুরে টিফিনের বিরতিতে আসামি কিশোর দশম শ্রেণির মারুফসহ কয়েক জনকে হুমকি দেয়। ঘটনার চার দিন আগে সকালে দুই বন্ধুর মধ্যে তর্ক-বিতর্কের ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে আগে থেকে শত্রুতা ছিল। এই ঘটনার জের ধরে ওরা প্রতিশোধের প্রস্তুতি নেয়। দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পরপর দলবল নিয়ে ওরা সহপাঠীদের পিছু নেয়। পাংগাশিয়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে মারুফ, নাফিজ, সিয়ামসহ অন্যদের ব্রিজের ওপর গতিরোধ করে। একপর্যায়ে ব্রিজের ওপর আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা কয়েকজন মিলে মারুফ, নাফিজসহ অন্যদের মারধর শুরু করে। এরপর ঘাতক সেই কিশোর ছুরি নিয়ে সিয়াম, মারুফ ও নাফিজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। সহপাঠী ওই কিশোরের ছুরিকাঘাতে তারা গুরুতর আহত হয়। সিয়াম, নাফিজ ও মারুফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারুফ ও নাফিজকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানকার চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
খন্দকার মঈন আরও বলেন, ঘটনার পর ঘাতক কিশোর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে প্রথমে বাড়ি যায়। বাড়ি গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। পরে বাউফলের ধুলিয়া লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় আসার পথে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি নদীতে ফেলে দেয়। এরপর সে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে নরসিংদীর রায়পুরায় এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তার অপর কিশোর হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে পটুয়াখালী থেকে বাসে ঢাকায় এসে পল্লবীতে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে।
গ্রেপ্তাররা স্থানীয়দের কাছে বখাটে হিসেবে পরিচিত। তারা বাউফলের পাংগাশিয়া এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য গ্যাং তৈরি করে। তারা সব সময় ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন অস্ত্র বহন করত। এলাকায় মারামারিসহ বিভিন্ন ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। এলাকায় উঠতি বয়সী কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন অপরাধে উৎসাহ দিত। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
শিরোনামপটুয়াখালি