একটি দোকানঘর কেনার জন্য নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে স্ত্রীর হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন বাবুগঞ্জের উত্তর রহমতপুর গ্রামের গাছকাটা শ্রমিক আনোয়ার হোসেন লেদু। স্বপ্ন ছিল একটি লাকড়ি বিক্রির দোকান দিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু পরকীয়া প্রেমে আসক্ত স্ত্রী শিল্পী বেগমের মনে ছিল ভিন্ন সংকল্প। সরল বিশ্বাসী স্বামী লেদু ভিটামাটি বিক্রির দুই লাখ টাকা স্ত্রীর হাতে জমা রেখে সকালে প্রতিদিনের মতো গাছ কাটতে যান। কথা ছিল সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে দোকান মালিকের সাথে স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ হয়ে হস্তান্তর করবেন ওই টাকা।
তবে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আনোয়ার হোসেন লেদু দেখেন দরজায় তালা ঝুলছে। বাড়িতে নেই তার প্রিয়তমা স্ত্রী শিল্পী বেগম। সেই সাথে স্ত্রীর ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ বাড়িতে নেই বহনযোগ্য কোনো মালামাল। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়া লেদু পাগলের মতো ছুটে যান শ্বশুর বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর উপজেলার চরপ্রসন্নদী গ্রামে।
সেখানে তার শ্বশুর মিন্টু শেখ প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করলেও পরে তার ৩ ছেলেকে নিয়ে অস্থানীয় আর অসহায় জামাই লেদুকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেন। নিরুপায় দিনমজুর লেদু আহতাবস্থায় ফিরে আসেন নিজ গ্রাম বরিশালের বাবুগঞ্জে। পরে আদালতে দায়ের করেন একটি মামলা।
এভাবেই স্ত্রীর নিদারুণ প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়ে এখন আদালতের বারান্দায় প্রতিনিয়ত চক্কর কাটছেন উপজেলার উত্তর রহমতপুর গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার হোসেন লেদু। আদালতে হাজিরা দিতে এসে বারান্দার কাঁদতে দেখে গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় অসহায় আনোয়ার হোসেন লেদুর।
ভীষণ হতাশা আর দুঃখে কাতর দিনমজুর লেদু জানান, প্রতারক স্ত্রী শিল্পী বেগম সুকৌশলে তার শেষ সম্বল জমি বিক্রির নগদ ২ লাখ টাকা ছাড়াও ঘর থেকে স্বর্ণালংকারসহ বহনযোগ্য আরো প্রায় ৫০ হাজার টাকার মালামাল ব্যাগভরে নিয়ে পালিয়ে যায়।
তাকে ফিরিয়ে আনতে শ^শুর বাড়িতে গিয়ে আমি বেধড়ক মারপিটের শিকার হলে বরিশাল এসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে পরে সুস্থ্য হয়ে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতে একটি নালিশী মামলা (এমপি মামলা নং-১৬/২০১৭) দায়ের করি।
ওই মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিমানবন্দর থানার ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিমানবন্দর থানার এসআই ইউসুফ আলী প্রতারক স্ত্রী শিল্পী বেগমসহ সকল আসামীকে দন্ডবিধি ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারায় অভিযুক্ত করে ১ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আদালত সব আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে বরিশালে মামলার খবর পেয়ে পলাতক স্ত্রী শিল্পী বেগম গোপালগঞ্জ আদালতে দিনমজুর স্বামী আনোয়ার হোসেন লেদুর বিরুদ্ধে পাল্টা নারী নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
সেই মিথ্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পন করতে গিয়ে প্রায় একমাস কারাভোগের পরে সম্প্রতি জামিনে বের হন লেদু। তবে এখনো প্রতিমাসে তাকে কমপক্ষে দুইবার গোপালগঞ্জ আদালতে গিয়ে ওই মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে।
এদিকে স্ত্রীর প্রতারণার বিচার চেয়ে বরিশাল আদালতে দায়ের করা নিজের মামলায়ও তাকে দৌঁড়াতে হচ্ছে আইনজীবীদের চেম্বার আর আদালতের বারান্দায়। দিন এনে দিন খাওয়া আনোয়ার হোসেন লেদু বরিশাল আর গোপালগঞ্জের আদালতে মামলার জালে আটকে গিয়ে এখন কর্মহীন এবং নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
দুই জেলার দুই আদালতের বারান্দায় চক্কর কাটতে কাটতে সর্বস্বান্ত দিনমজুর লেদুর সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। স্ত্রীর নিষ্ঠুর প্রতারণায় জমিজমা আর সংসারসহ সর্বস্ব হারানো নিঃসন্তান লেদুর এখন চোখের পানিই একমাত্র সম্বল।
বরিশালের খবর