৬ ঘণ্টা আগের আপডেট সকাল ৬:৯ ; বুধবার ; মে ৩১, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

বাবুগঞ্জে ৪৩ প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য!

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
৬:১১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে বেপরোয়া ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের শূণ্যপদ পূরণে ঘুষের তহবিল গঠন করে সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা। এমনকি ৬টি বিদ্যালয় নিয়ে হাইকোর্টে চলমান ২ মামলায় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও তা উপেক্ষা করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকদের। এদিকে উপজেলার ৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন দুজন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও তোলপাড় চলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে- বাবুগঞ্জ উপজেলার ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূণ্যপদের বিপরীতে গত ২৯ আগস্ট জেপ্রাশিঅ/বরি/১৪১৯ নং স্মারকের আদেশের মাধ্যমে ৪৩ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেন বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ মজুমদার। বাবুগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত ৮ শতাধিক সহকারী শিক্ষকের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়নের জন্য ৫০টি শূণ্যপদের বিপরীতে ৫০ জনের নাম চূড়ান্ত করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম। তবে দাপ্তরিক কাগজপত্রে তিনি বাছাই করলেও বাস্তবে তিনি প্রস্তুতকৃত তালিকায় স্বাক্ষর করেন মাত্র। প্রকাশ্যে ঘুষের হাট বসিয়ে এই বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি চিহ্নিত দালাল চক্র। ওই দালাল চক্রই জেলা শিক্ষা দপ্তরের জোগসাজসে পদোন্নতি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় অর্ধকোটি টাকারও বেশি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান সিকদার অভিযোগ করেন, উপজেলার ৫/৬ জন শিক্ষকই মূলত শিক্ষা অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন। এরা নামধারী শিক্ষক হলেও কখনো বিদ্যালয়ে ক্লাস করেন না। সারাবছর শিক্ষা অফিসের বারান্দায় বিভিন্ন তদবির আর দালালির জন্য পড়ে থাকেন। এই চিহ্নিত দালাল চক্রটি এই নিয়োগে প্রধান শিক্ষক পদপ্রত্যাশী প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে প্রায় ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। বরিশাল অফিসের প্রধান কর্তাব্যক্তিরাসহ উপজেলার পিয়ন পর্যন্ত ওই ঘুষের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। বেপরোয়া ঘুষবাণিজ্যের কারণেই এক্ষেত্রে মানা হয়নি জ্যেষ্ঠতার কোনো বিধান কিংবা নিয়মনীতি। এমনকি ৬টি বিদ্যালয় নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে চলমান দুই মামলায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও আদালতের নির্দেশ সরাসরি অমান্য করা হয়েছে।

এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুমারিয়ারপিঠ জাহিদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন, প্রতাপপুর স. প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হানিফ খান, উত্তর পশ্চিম রাকুদিয়া স. প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার, পূর্ব ক্ষুদ্রকাঠি স. প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাশা হাইনুনা, দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নব আদর্শ স. প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন এবং দক্ষিণ ভূতেরদিয়া নতুন চর স. প্রা. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তাদের রেজিস্ট্রার্ড বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণ করার পর নতুনভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের তৎপরতা শুরু হলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ৬টি রিট পিটিশন মামলা দায়ের হয়। ৭৩০৩/২০১৭ নম্বর রিট মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছরের ১০ জুন ওই নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর ৬ মাসের স্থাগিতাদেশ দেন।

এছাড়াও ৬৩২১/২০১৮ নং অপর একটি রিট পিটিশন মামলায় বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছরের ১১ জুলাই বিবাদীদের বিরুদ্ধে রুল জারিসহ রিটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ার পর্যন্ত নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের ওপর স্থিতিবস্থার আদেশ দেন। মহামান্য হাইকোর্টের দুইটি আদেশ থাকার পরেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে উচ্চ আদালত অবমাননা করে বিচারাধীন ওই ৬টি বিদ্যালয়ে নতুন ৬ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষকরা।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম বলেন, ঘুষবাণিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তথ্য চাওয়ার পরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমি উপজেলার মোট ৫০টি বিদ্যালয়ের শূণ্যপদের তালিকা প্রেরণ করেছি। সেখানে ১৩ বিদ্যালয় নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় সেই মামলা নম্বরগুলো উল্লেখ করে ফরোয়াডিং দিয়ে পাঠিয়েছি। জেলা অফিস থেকে ৫০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর বেশিকিছু আমি জানি না।

এদিকে এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো. আবদুল লতিফ মজুমদার জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রেরিত ৫০ বিদ্যালয়ের শূণ্যপদের মধ্যে ৭টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে হাইকোর্টের স্থাগিতাদেশ পাওয়ায় সেগুলো বাদ রেখে ৪৩টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিলকারী বাকি ৬টি বিদ্যালয়ের স্বপক্ষে আদালতের কোনো আদেশ কিংবা নির্দেশনা আমরা হাতে পাইনি। তাই নিয়মমাফিক সেগুলোতেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ একেবারেই অবান্তর। তবে সংক্ষুব্ধ ওই ৬টি বিদ্যালয়ের স্বপক্ষে হাইকোর্টের কোনো আদেশ পেলে তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং নিয়োগকৃত প্রধান শিক্ষকদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।

এদিকে নতুন নিয়োগকৃত ৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের এখনো যোগদান করতে দেননি সেখানে কর্মরত পুরাতন প্রধান শিক্ষকরা। তারা অনেকেই বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও হাজিরা খাতা লুকিয়ে রেখেছেন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রধান শিক্ষক মঙ্গলবার তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলেও পুরাতন প্রধান শিক্ষকদের বাঁধার মুখে যোগদান না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষা অফিসে তোলপাড় চলছে। উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।’

বরিশালের খবর

আপনার ত লিখুন :

 

ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  লালমোহনে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু  ঝালকাঠিতে টমটম উল্টে প্রাণ গেল চালকের  পাথরঘাটায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু  স্টেডিয়ামে ম্যাচ চলাকালে বজ্রপাতে ক্রিকেটারের মৃত্যু  ভোলা/ প্রিয় কুকুরকে পিটিয়েছে প্রতিবেশী, আদালতে সবুরার মামলা  পবিপ্রবিতে “মোটিভেশনাল অন এ্যাকরেডিটেশন ইন হায়ার এডুকেশন” শীর্ষক ওয়ার্কশপ  পটুয়াখালী সদর ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন নম্বরে পরিবর্তন  কলাপাড়ায় শ্বাসনালীতে মারবেল আটকে শিশুর মৃত্যু  হিজলায় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত  হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শিয়ালকাঠি আ' লীগের সম্পাদক নাসির