বরিশাল: এবার বরিশালের বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এক কিশোরকে আটকে মারধর করার পর উৎকোচ নিয়ে মুক্তি দেয়ার। থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাসেলের এই বর্বরতার শিকার কিশোর শাহিন হাওলাদার। শুধু এই নির্মম নির্যাতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বিষয়টি, স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর চাপ প্রয়োগ করে কিশোরকে চিকিৎসা বঞ্চিতও করা হয়েছে। এখন কিশোর শাহিন হাওলাদার বাড়িতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে বিষয়টি চাউর থাকলেও কেউ এএসআই রাসেলের ভয়ে মুখ খুলছে না। অভিযোগ রয়েছে, এই পুলিশ কর্মকর্তা স্থানীয় নিরপরাধ কিশোরদের বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে আটক পরবর্তী বাণিজ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ লিপ্ত।
সেই ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাতে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভূতেরদিয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ির ছেলে শাহিন হাওলাদারকে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত থাকার মিথ্যে অভিযোগ তুলে আটক করে। এক পর্যায়ে কিশোরের বাবা হোসেন হাওলাদার ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার আকুতি জানালে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন এএসআই রাসেল। সেই টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেই কিশোর বয়সি ছেলে শাহিন হাওলাদারের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। নির্মমতার ভয়াবহ চিত্র মা সহ্য না করতে পেরে বাসা থেকে ২৫ হাজার টাকা এনে এএসআই রাসেলের হাতে তুলে দেন। কিন্তু কাঙ্খিত অর্থ না মেলায় থামেনি নির্যাতন।
এক পর্যায়ে ছেলেকে বাঁচাতে বাবা মা পুলিশের হাত-পা ধরাধরি করতে থাকলে সেই সুযোগে অপর পুলিশ সদস্যরা ঘরে ঢুকে আরও ৩৫ হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়ে যায় বলে অভিযোগ শাহিনের বাবার। যদিও এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে এএসআই রাসেল বলছেন, শাহিন হাওলাদার মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে। যে কারণে সেই রাতে তাকে আটক করে তল্লাশী করা হয়। কিন্তু তার শরীরে কোন হাত তোলা হয়নি। একই সাথে উৎকোচ এবং বাসায় ঢুকে টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেছেন।
তবে কিশোর শাহিন হাওলাদারের মা শেফালি বেগম বলছেন, তার ছেলে ওই রাতে বাসায় ঘুমমগ্ন থাকাকালে পুলিশের সোর্স পরিচয় দানকারি সাইফুল তাকে ডেকে ওঠায়। বাসা থেকে বের হওয়া মাত্রই কোন কিছু না বলে এক পর্যায়ে তাকে মারধর শুরু করে দেন এএসআই রাসেল। এ সময় আমি চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে শাহিনকে বাঁচাতে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল তার ছেলের বিরুদ্ধে ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে নগদ ২৫ হাজার টাকা বাসার আলমিরা থেকে বের করে দেয়ার পরও চলতে থাকে নির্যাতন।
পরবর্তীতে পুলিশ সদস্য আলমিরা থেকে জোরপূর্বক আরও ৩৫ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট ৬০ হাজার টাকা পকেটস্থ করে শাহিনকে নিয়ে থানার দিকে চলে যান। কিন্তু খবর আসে এএসআই রাসেল আরেক দফা মারধর করে শাহিনকে বাড়ির অদুরে খেয়াঘাট এলাকায় নদীর তীরে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে রাত ২ টার দিকে এ কিশোরকে উদ্ধার করে উপজেলার বাহেরচর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি লুকোচাপা রাখতে হাসপাতালে চাপ প্রয়োগ করে শাহিনের নাম কাটিয়ে যান এএসআই রাসেল। এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, সেই রাতের বর্বরতার কথা। উৎকোচ না পেলে কতটা ভয়ানক হতে পারেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে এই সাবেক ইউপি সদস্য ঘটনার পর মুখ খোলায় তাকে পুলিশ হয়রানীর ওপর রাখছে। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম ওয়াকিবহাল নন বলে জানিয়েছেন। তার ভাষ্য হচ্ছে, লোকমুখে বিষয়টি শুনেছেন। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। যদি কোন ব্যক্তি অভিযোগ দেন তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই বিষয়ে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা।
টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর