বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:২৩ অপরাহ্ণ, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদ রুপাতলী এলাকার আলোচিত সন্ত্রাস সুমন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার এলিট ফোর্সের একটি বিশেষ টিম রুপাতলীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। বরিশাল শহরের সদর রোডসংলগ্ন বিএনপি অফিস পোড়ানোসহ একাধিক সন্ত্রাস করার অভিযোগ আছে এই সুমন মোল্লার বিরুদ্ধে। এবং তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন শ্রমিকলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে কয়েক বছর ধরে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছিলেন। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে বিএনপি অফিস পোড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেলো এবং রুপাতলী এলাকার ত্রিশোর্ধ্ব এই বাসিন্দা গ্রেপ্তারও হলেন।
সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, র্যাব সুমন মোল্লাকে বিএনপি অফিস পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার করে দিয়েছে, যে মামলায় অভিযুক্ত বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম কারান্তরীণ।
রাজনৈতিক সূত্র জানায়, আলোচিত সুমন মোল্লা তৎকালীন সময়ে সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়বাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারী ছিলেন। কিন্তু একই এলাকার বাসিন্দা এবং মোল্লা পরিবারেরই সন্তান সাদিক আব্দুল্লাহ’র আস্থাভাজন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লাদের বেশিদিন আর কালিবাড়ি নেতার যেতে পারেননি সুমন। রাজনীতির মাঠে কোনঠাসা থাকা অবস্থায় তিনি রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে টেম্পু-মাহিন্দ্রা-থ্রি হুইলার সমিতির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এনিয়ে মামলা মোকাদ্দমাও চলমান।
সূত্রটি জানায়, এরপরেও সুমন মোল্লা কয়েক দফা রাজনৈতিক নেতা বদল করে সন্ত্রাস চালাতে গিয়ে রুপাতলীতে নানান বিতর্ক তৈরি করেন। কখনও বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি জাহিদ ফারুক বলয়ে, সর্বশেষ বরখাস্ত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়বাতের আশ্রয়ে থেকেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেন। জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ মেয়র হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণের পরপরই সুমন মোল্লা আলোচিত ওই সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ২৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহামুদের কর্মী-সমর্থকদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেই ঘটনায় গোটা শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।
এছাড়াও রুপাতলীর মোল্লা পরিবারের এই সন্তানের বিরুদ্ধে আছে, শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার মতো গুরুতর অভিযোগ। শ্রমিকলীগ নেতা সুমন মোল্লার অতীতে এর চেয়েও ভয়ানক সন্ত্রাস করেছেন। জাল-জালিয়াতিতেও পটু এই সন্ত্রাসী ২০১৩ সালেও র্যাবের হাতে অস্ত্রসমেত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এই মামলায় কিছুদিন কারাবন্দি থাকলেও আইনি ফাঁক গলে তিনি জামিনে মুক্ত হন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় অবস্থান নিয়ে করছিলেন সন্ত্রাস।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সুমন মোল্লার বিরুদ্ধে পুলিশ পেটানো, আদালতের সঙ্গে জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, মাদকসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকায় তেমন একটা হয়রানি হতে হয়নি। আবার যখন হয়রানির সম্ভবনা দেখেছেন, তৎক্ষণাৎ নেতা বদল করে হয়েছেন শক্তিমান। গোটা রুপাতলীতে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত তার ভয়াত্মক সন্ত্রাস রোধ করা যায়নি।
অভিন্ন তথ্য দিয়ে ২৪/২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতারা জানান, সুমন মোল্লা কখনও সাদিক আব্দুল্লাহ, আবার কখনও সদর আসনের সাবেক এমপি জাহিদ ফারুক শামীমের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডসহ আশপাশ এলাকাসমূহে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস চােিয়ছেন। ক্ষমতার প্রভাবে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করাসহ হামলা চালিয়ে মারধরের বহু উদাহরণ আছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলার অভিযোগ আছে এবং বরিশাল বিএনপি অফিস পোড়ানো মামলায়ও তিনি অভিযুক্ত।
সূত্রগুলো জানায়, এই সুমন মোল্লা সর্বশেষ খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি বরিশালের আলোচিত জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুনের সত্ত্বাধিকারী মিজানুর রহমানের সান্নিধ্যে পৌছে গেছিলেন। জানা গেছে, সুমন মোল্লাকে বিএনপি অফিস পোড়ানোর যে মামলাটিতে গ্রেপ্তার করা হয়, সেই মামলার বাদী বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। এই মামলাটির ১ নং আসামি বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি জাহিদ ফারুক শামীম গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি আছেন। তাছাড়া সুমনের আরেক নেতা ফরচুন মিজানকেও বরিশাল মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদারের ওপর হামলাসহ কুপিয়ে জখম করার মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শেল্টারদাতা মিজানসহ অনেকে পলাতক থাকলেও সুমনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে এলিট ফোর্স। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, সুমন মোল্লাকে প্রাথমিকভাবে বিএনপি অফিস পোড়ানো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে যদি আরও কোনো মামলা থাকে, পরবর্তীতে সেগুলোতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
আলোচিত সন্ত্রাসী সুমন মোল্লা গ্রেপ্তার এবং তার কারাগারে প্রেরণের খবর গোটা রুপাতলী এলাকাবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে। ভয়ানক সন্ত্রাসকে আইনের আওতায় নিয়ে আসায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীসহ সুশীল সমাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানিয়েছে, বিশেষ করে এলিট ফোর্সকে।’