প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোনোদিনও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। তারা (বিএনপি) অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সবসময় সমুন্নত রাখবে। সে জন্য সংবিধান পরিপন্থী কোনো সরকারব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব না।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী সহায়ক সরকার বলে কোনো সরকার গঠন করার বিধান নেই। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সদস্য তানভীর ইমামের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছিলাম। তার মানে, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে, সরকারের পরিসর ছোট করা হবে। সরকার নির্বাচনকালীন শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে, কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিতর্কিত করার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন- ২০০৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্পষ্ট রূপরেখা থাকা সত্ত্বেও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করার উদ্দেশ থাকায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২ বছর ক্ষমতায় থাকে। এসব ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিএনপি কোনোদিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জন্ম নিয়েছে মার্শাল ল জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করার মাধ্যমে অবৈধ পথে, তাই অবৈধ দাবি করাটা তাদের অভ্যাস।
জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটারবিহীন গণভোট করেছিল বিএনপি। সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। জিয়ার ওই ক্ষমতাগ্রহণ আদালত পরে অবৈধ ঘোষণা করে। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে মাগুরা ও ঢাকার উপনির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি করেছিল এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে অবৈধ সরকার গঠন করে বিএনপি। গণআন্দোলনের সম্মুখীন হয়ে মাত্র দেড় মাসের মাথায় তাদের পতন ঘটে। ওই সময়ে বিএনপি নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল।
জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি দেখা যাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন অবসরসীমা বাড়ানো হয়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর করে দিয়েছি।
সরকারদলীয় সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, দেশের ভেতরে বিনিয়োগের জন্য সব সুযোগ-সুবিধাই নিশ্চিত করেছে সরকার। কিন্তু দেশে বিনিয়োগ না করে যারা অর্থ পাচার করতে চায় তারা তো তা করতেই চাইবে। কিন্তু টাকা পাচার করলে আমরা তা শনাক্ত করে দেশে ফেরত আনছি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচারকৃত অর্থ আমরা দেশে ফেরত এনেছি।
দিদারুল আলমের সম্পূরক প্রশ্নে সংসদ নেতা জানান, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বর্তমান সরকার কঠোর আইন করে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। নতুন করে ৪১টি নারী ও শিশু বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু ট্রাইব্যুনালই নয়, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইভটিজিংসহ নারী-শিশুদের উত্ত্যক্ত কিংবা সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কঠোর পদক্ষেপের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবে পারিবারিকবিরোধী ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধী নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
শিরোনামজাতীয় খবর