বরগুনার আমতলীতে ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে মরণব্যাধী ডিএমডি (ডুচেন্স মাসকুলার ডিসট্রোফি) রোগে আক্রান্ত দুই সহোদর নাঈম মুসুল্লী (১৪) ও সাইদুল মুসুল্লী (৭)। এ রোগে শরীরের হাত-পা শুকিয়ে পঙ্গু হয়ে অচল হয়ে যাচ্ছে তাকের।
এবং আস্তে আস্তে মৃত্যু দিকেও চলে যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।’
হাবিব মুসুল্লীর তিন পুত্র ছিলো। গত বছর মে মাসে এই রোগে বড় ছেলে মিজান মারা গেছে।
মেঝ ছেলে নাঈমও এই রোগে পঙ্গুত্ব অবস্থায় শয্যাশায়ী। ছোট ছেলে সাইদুলের দু’পায়ের থোড়া মোটা হয়ে গেছে। হাটতে কষ্ট হচ্ছে। খেয়ে না খেয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বাবা দু’ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছেন।’
ছেলেদের এ অবস্থায় দিশেহারা হতদরিদ্র বাবা ও মা।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা গ্রামের হাবিব মুসুল্লীর ২০ বছর পূর্বে ফেরদৌসি বেগমের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রী ঢাকায় দিনমজুরের কাজ নেয়। দুই বছর পরে তাদের কোলজুড়ে আসে একটি পুত্র সন্তান।
নাম রাখা হয় মিজান মুসুল্লী। এর চার বছর পরে নাঈম এবং এগার বছর পরে জন্ম নেয় সাইদুল মুসুল্লী।
মিজানের বয়স সাত বছর হলেই তার শরীরের পরিবর্তন দেখা দেয়। তার দুই পায়ের হাটু মোটা হয়ে আস্তে আস্তে হাত পা শুকিয়ে রগ খিচুনী দিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। এভাবে নাঈমের ও একই অবস্থা দেখা দেয়। দুই ছেলেকে বাচাঁনোর তাগিদে হতদরিদ্র মা ও বাবা সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন।
মিজান ও নাঈমকে ঢাকা পিজি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু কোন চিকিৎসাই কাজে আসছে না।’
সন্তানদের বাচাঁনোর জন্য বহু চিকিৎসক ও ওঝার কাছে ধর্না দিয়ে কোন কাজ হয়নি। ছেলেদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন।
বাড়ীতে বসত ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই। নয় বছর বিছানায় শয্যাশায়ী থাকার পরে গত বছর মে মাসে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে ধুকে ধুকে মিজান মারা গেছে।
মেঝ ছেলে নাঈম গত ছয় বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। নাঈম বিছানায় পরে ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাঈমের হাত-পা ও শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চিকন হয়ে শুকিয়ে কংকাল আকার ধারন করেছে।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাঁকা হয়ে পরে আছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে খাওয়া দাওয়া করতে হয়। কোন চলাফেরা করতে পারেনা। বাব-মা হাল ছেড়ে দিয়ে ছেলের মুত্যু দেখার অপেক্ষায় আছে। আত্মীয় ও প্রতিবেশী ভয়ে নাঈমের কাছে যেতে চায় না। শেষ ও ছোট ছেলে সাইদুলের শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। তার পায়ের হাটু মোটা হয়ে যাচ্ছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না।
বাবা হাবিব মুসুল্লী দুই ছেলের চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্যের জন্য ঘুরছেন। যে সাহায্য পায় তা দিয়ে সংসার চালান ও ছেলেদের চিকিৎসা করেন। এ পরিবার সরকারী ও বেসরকারী কোন সাহায্য পাচ্ছেনা।
ছেলেদের এ অবস্থার কারনে বাবা হাবিব মুসুল্লী ও মা ফেরদৌসি বেগম প্রায় মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এমন দুরারোগ্য ডিএমডি রোগে আক্রান্ত হয়ে এক ছেলের মৃত্যু এবং দুই ছেলে এ ব্যাধীতে আক্রান্ত হওয়ায় বাবা মা দিশেহারা।’
নাঈম কেঁদে বলে “আমিতো বাঁচবো না, দাদা (মিজান) আমার সামনে মরে গেল, আপনারা আমার বাবা মাকে দেখে রাখবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন”।
মা ফেরদৌসি বেগম বলেন “মোর বড় পোলা মিজান চোহের সামনে মইর্যাত গ্যাছে। একটা বিছানাই শুইয়্যা রইছে, হেটাও কোন সময় যায়, আর ছোড পোলাডার পাও মোডা অইয়্যা শুকাইয়া যাইতে আছে। মোরে আল্লায় এম্যান বিপাদ দেছে কিছু হরতে পারি না।
কানতে কানতে চোহে আর পানি নাই। টাহা নাই পয়সা নাই পোলা দুইডা কি দিয়া চিহিসা হরমু। মোর পোলা মোর জান মোর পোলারা মইর্যাল গ্যালে মুই মইর্যাা জামু। মোর বাইচ্যা থাইক্কা কোন লাভ নাই।
গরিব মানু যেহানে কইছে হেইহানে লইয়্যা গেছি, কেউ মোর পোলারে ভালে হরতে পারে নাই।
পোলার বাহে মানের ধারে চাইয্যা যা পায় হেইয়্যা দিয়া চিহিসা হরি। মুই প্রধান মন্ত্রি শেখ হাসিনার কাছে মোর পোলা দুইডারে চিহিসার আবেদন হরি। সে বিলাপ করে কেঁদে বলেন ও আল্লা তুই মোরে লইয়্যা যা, মোর আর বাঁচার স্বাদ নাই।”
আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. আবদুল মতিন বলেন লক্ষণে মনে হয় ডিএমডি রোগে আক্রান্ত। আমি খোঁজ নিয়ে ওই দুই সহোদরকে দেখতে যাব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।”
শিরোনামখবর বিজ্ঞপ্তি, বরগুনা