দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে আটকে দেওয়ার এক সাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে বাংলাদেশ। তৈরি করা হয় ঘূর্ণি উইকেট। তিন স্পিনারকে লাগিয়ে দেওয়া হয় বোলিং আক্রমণে। যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো দলের বিপক্ষেই এই ‘কমন নিয়ম’ পালন করে বাংলাদেশ। কিন্তু শুধু উইকেট বানালেই তো হবে না, সেটাকে কাজে লাগানোর মত বোলারও তো থাকতে হবে, তাই নয় কি?
বোলারের প্রসঙ্গ উঠলেই চলে আসছে সাকিব আল হাসানের নাম। ইনজুরিতে মাঠের বাইরে থাকা বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারকে মিস করছে বাংলাদেশ। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিং ছন্নছাড়া। রাজ্জাক-তাইজুলরা উইকেট নিচ্ছেন, মিরাজ উইকেট নিচ্ছেন; কিন্তু ঘূর্ণি পিচকে কাজে লাগাতে পারছেন কতটুকু? আর ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গিয়ে যে কী করছেন, সেটা তারা নিজেও হয়ত জানেন না!
কথা হচ্ছিল মিরপুরের পিচ নিয়ে। পিচ বানিয়েছেন লঙ্কান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। নির্দেশ দিয়েছে বিসিবি। পিচ হয়েছে বাংলাদেশের মনমতই। টেকনিক্যাল ডিরেক্টের খালেদ মাহমুদ সুজন হয়ত ভাবছিলেন, এবার মাঠে তিন স্পিনার নামিয়ে দিলেই হয়। ঘূর্ণি বলে টপাটপ উইকেট ফেলে দেবে শ্রীলঙ্কার। এই ভাবনাটা যে কতটুকু হাস্যকর ছিল তা লঙ্কান ব্যাটসম্যান রোশেন সিলভার কথাতেই স্পষ্ট।
ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা রোশেন দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেন। তিনি বুঝতেই পারছেন না যে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার জন্য কেন এমন উইকেট তৈরি করল! উপমহাদেশের দল হিসেবে এসব উইকেটে তারা ছোট থেকেই খেলে অভ্যস্ত। তাই মিরপুরের উইকেট নিয়ে খুব একটা যায়-আসছে না তাদের। তাই তারা বাংলাদেশকে ৩৩৯ রানের টার্গেট দিতে পেরেছে।
রোশেনের ভাষায়, ‘আমি ভাবিনি এমন কিছু হতে পারে। ভেবেছিলাম, ভালো ব্যাটিং উইকেট হবে। উপমহাদেশে অস্ট্রেলিয়া কিংবা অন্য দেশ এলে আমরা এমন উইকেট বানাই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণ তো বেশ ভালো। আমি জানি না কেন ওরা এমন উইকেট তৈরি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরের মাঠে এ ধরনের উইকেটে খেলে আমরা অভ্যস্ত। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক খেলার চেষ্টা করেছি। আমি একে ভালো উইকেট বলছি না, কিন্তু আমরা জানতাম এখানে বল ঘুরবে।’
প্রতিপক্ষ দলের একজন ব্যাটসম্যান যখন এমন কথা বলে, তখন বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তাদের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন না তোলার অবকাশ থাকে না। ঘূর্ণি উইকেট তৈরির মুখস্তবিদ্যা যে সবসময় কাজে লাগে না এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কিছু হতে পারে না। এই মুখস্তবিদ্যার কোপে পড়েই মিরপুরে এখন বড় হারের মুখে বাংলাদেশ। হার বাঁচাতে হলে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল-লিটন জুটির চেয়েও অবিশ্বাস্য কিছু করতে হবে বাংলাদেশকে।
খেলাধুলার খবর