দীর্ঘদিন পর বরিশাল নগরের গুরুত্বপূর্ণ দুই সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। তবে এই সংস্কারকাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়কে যেনতেনভাবে প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আমতলা মোড় থেকে বাংলাবাজার হয়ে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত সড়ক এবং ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জিলা স্কুল থেকে সদর রোড হয়ে নাজিরের পুল পর্যন্ত সড়ক সংস্কার করা হবে।
অনিয়ম নিয়ে এক কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, আলেকান্দা এলাকায় পিচের সঙ্গে পোড়া মবিল ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। মেয়র পরিদর্শনও করেছেন। তিনি সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
তবে পোড়া মবিল ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার মো. শাহীন বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি সাধ্যমতো কাজ করছি।’
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, আমতলা মোড় থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত সড়ক সংস্কারে দুই ইঞ্চি পুরু কার্পেটিং করা হবে। আর নাজিরের পুল থেকে জিলা স্কুল পর্যন্ত করা হবে আড়াই ইঞ্চি পুরু কার্পেটিং। কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কের খানাখন্দ ভালোভাবে পরিষ্কার করে পাথর ও পিচ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর পুরো সড়কের ওপর কার্পেটিং করতে হবে। এসব কাজ সঠিকভাবে না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলেকান্দা আমতলা মোড় থেকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ভরাট শেষে চলছে কার্পেটিং। এই কাজের মান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। সড়কের বেশির ভাগ স্থানে পুরুত্ব কম করা হচ্ছে। একই অবস্থা সদর রোড এলাকায়ও। অনেক স্থানে এক থেকে দেড় ইঞ্চির বেশি পাথর দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাবাজারের ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ তালুকদার বলেন, কিছুদিন আগে বৃষ্টির মধ্যে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সেই কাজ বৃষ্টিতে উঠে গেছে। অভিযোগ দেওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে আবার শুরু হয়েছে। এবার আগের চেয়ে একটু ভালো কাজ হচ্ছে।
আলেকান্দা বাংলাবাজার এলাকায় কথা হয় নির্মাণশ্রমিক লিটন আকনের সঙ্গে। তিনি জানান, কাজে সিটি করপোরেশন ধরেছে, দুই ইঞ্চি পুরু করতে হবে। কিন্তু দুই ইঞ্চি কেউ করে না। অনেক স্থানে পৌনে দুই ইঞ্চি করা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে এক-দেড় ইঞ্চিও করা হয়েছে। তবে সেগুলো সড়কের পাশের অংশ।
সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দেশি পিচ ও পাথর ব্যবহার করতে বলেছি। তবে পিচে পোড়া মবিল মেশানোর অভিযোগ সঠিক নয়।’ তাঁর দাবি, কাজের মান নিয়ন্ত্রণে করপোরেশন থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সদর রোড সংস্কারকাজের ঠিকাদার মো. সিরাজুল আলম সিকদার বলেন, ‘নিম্নমানের কাজের অভিযোগ সঠিক নয়। বিটুমিন আড়াই ইঞ্চি নয়, দুই ইঞ্চি করার কথা। আমরা সেভাবেই করছি। তবে কোনো কোনো স্থানে সড়কের ঢাল ঠিক রাখার জন্য এক-দেড় ইঞ্চিও করা হচ্ছে।’
মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, আলেকান্দা এলাকায় সড়ক সংস্কারকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর প্রমাণও পেয়েছেন। মেয়র বলেন, সড়ক সংস্কারকাজে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি রোববার দুপুরে সদর রোডের সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেছেন। সড়ক সংস্কারে যাতে অনিয়ম না হয়, সে জন্য প্রকৌশলীদের সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সূত্র- প্রথম আলো
খবর বিজ্ঞপ্তি, বরিশালের খবর