বরিশাল নগরীর বৃহৎ তিনটি বস্তি ১০নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত। রাস্তাঘাটের সমস্যা তো রয়েছেই। তবে এই ওয়ার্ডের মূল সমস্যা মাদক। তিন বস্তিকে ঘিরে মাদক ব্যবসা নিয়ে বেশ চিন্তিত এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তবে এই সমস্যাটি নিরসনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীনের। এমনটাই অভিযোগ এই এলাকার বাসিন্দাদের। সূত্রমতে- বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিশাল আওতার মধ্যে রয়েছে কীর্তনখোলা নদীসংলগ্ন কেডিসি বস্তি (যা এখন রাজ্জাক স্মৃতি কলোনী হিসেবে পরিচিত), ভাটারখাল বস্তি ও নামারচর বস্তি।
এই তিন বস্তিতেই মাদক ব্যবসায়ীদের আখড়া। নগরীতে মাদক সাপ্লাই হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম এই তিন বস্তি। অভিযোগ রয়েছে- এই তিন বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদেরও ইন্ধন দেন বর্তমান কাউন্সিলর। যে কারণে বেশ নির্বিঘেœই ব্যবসা চলে মাদক ব্যবসায়ীদের।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশ আটক করলেও তিনি থানা থেকে সেই মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। রাকিবুল ইসলাম নামে ওই ওয়ার্ডের এক ভোটার জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়েই শুধু পরে থাকেন না বর্তমান কাউন্সিলর। তিনি ফুটপাত দখল করে রেখেছেন কেডিসি সড়কে। ফুটপাতে গড়ে তোলা দোকানগুলো থেকে কাউন্সিলর জয়নাল ও তার ভাই প্রতিদিন ৫০টাকা করে উঠায়। শাহাজাহান নামে এক ব্যক্তি জানান, বলতে গেলে ১০ নম্বর ওয়ার্ডটি ভিআইপি ওয়ার্ডও বলা যায়। কেননা এই ওয়ার্ডের মধ্যেই রয়েছে প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কোয়ার্টার। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু উদ্যানও। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও প্লানেট পার্কটিও। তবে এত কিছু থাকার পরেও এই ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা, রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
তিনি বলেন- বর্তমান কাউন্সিলরের আমলে এই ওয়ার্ডে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এই ওয়ার্ডের তিন বস্তিতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ভোগান্তি এই এলাকার নিত্যসঙ্গী।
শরিফুল ইসলাম নামে কেডিসি এলাকার এক ব্যক্তি জানান, বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল মাদকবিরোধী ১০৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। যার নাম দেয়া হয়েছিলো মাদকবিরোধী কমিটি। কিন্তু এই কমিটি নিয়ে বিতর্কে পড়তে হয় জয়নালকে। ফাঁস হয়ে যায় কমিটি গঠনের মাধ্যমে তার মাদক বাণিজ্যের গোপন তথ্য। অর্থাৎ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেয়ার তথ্য। তাই ওই কমিটি আর বেশিদিন টেকেনি।
এর বাইরে জয়নাল আবেদীনের রয়েছে সুদের ব্যবসা। এছাড়া জমি দখলের ঘটনাতো রয়েছে অহরহ। অপরদিকে বান্দরোডে থাকা তার মালিকানাধীন আবাসিক হোটেলে পতিতা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে জয়নালের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ইতিপূর্বে বহু পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে প্রশাসনিক চাপে হোটেলের নাম পরিবর্তন করে ফেলেন জয়নাল। বিশেষ করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরে কেডিসিতে নিজ ঘরের সামনে থাকা বাস্তুহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখলের পায়তারা চালায় জয়নাল আবেদীন। সেখানে টিনের ঘরও তোলেন তিনি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জয়নালকে দখল মুক্ত করে দিতে হয় স্কুলের মাঠ। ওয়ার্ডবাসীর অভিযোগ, নিজের আখের গুছিয়েই সময় পায় না বর্তমান কাউন্সিলর। সেখানে ওয়ার্ডের জন্য কিভাবে কাজ করবে এই কাউন্সিলর।
ইতিপূর্বে ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য আসা একাধিক প্রজেক্ট বিক্রি করে ফেলেছেন অন্য ঠিকাদারদের কাছে। তাছাড়া যে ঠিকাদাররা কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে চাঁদা না পেলে কাজ বন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ করেছে জয়নালের বিরুদ্ধে। এসব কারণেই এই এলাকার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন হয়েছে জয়নালের। সাহানুর বেগম নামে ১০নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জানান, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করছেন। যেটা তিনি নিজেও অস্বীকার করতে পারবেন না। আমরা চাই এই ওয়ার্ডের উন্নয়ন। এখন যদি উন্নয়নের টাকাই কারও পেটে চলে যায় তাহলে উন্নয়নটা হবে কোথা থেকে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার যে কাজ করার কথা ছিল। তা কিছুই করেননি তিনি। বেহাল রাস্তাঘাটে দুর্ভোগ না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আর জলাবদ্ধতা এমন যেটা ঘরে পর্যন্ত এসে পৌছায়। আমরা চাই জনদরদী জনপ্রতিনিধি।
যে জনগণের জন্য কাজ করবে তাকেই এবারে ভোট দেব। এই সব অভিযোগের বিষয়ে ১০নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন বলেন- গত ৫ বছরে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অনেক কাজ করেছি আমি। আমার এই এলাকাকে মাদকমুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়নে কথা সবার মুখে। আমি কাউন্সিলর নির্বাচন করছি কেননা আমি কাউন্সিলর না হলে কেডিসি বস্তি আর থাকতো না।
ইতিপূর্বে বহুবার বস্তি উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা আমার কারণে পেরে ওঠেনি। আশা করি এবারেও ১০নম্বর ওয়ার্ডবাসী আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন এবং জয়যুক্ত হয়ে ওয়ার্ডের সকল উন্নয়ন কাজ করব।’’
শিরোনামবরিশালের খবর