বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, ০৪ জানুয়ারি ২০২০
বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সন্ত্রাসীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় এক সন্তানের জননী জেসমিন আক্তার (২৩) বিষপান করেন। দীর্ঘদিন ৪ মাস ২৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সকালে জেসমিন আক্তার তার বাবার বাড়িতে মারা যান।
শনিবার দুপুরে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
গত ১০ আগস্ট গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও এলাকায় বিয়েতে রাজি না হওয়ায় জেসমিনকে বেধড়ক মারধর করে লম্পট সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী (৪০)। পরে এই বিষয়টি জেসমিনের পরিবারের লোকজন স্থানীয় মেম্বারকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিল্লাল।
পরে বিল্লাল জেসমিনের মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলে এবং তাদের হত্যাসহ বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখায়। তার মা লাউড স্পিকারে মোবাইলে কথা বলায় পাশে থাকা জেসমিন সব কথা শুনতে পান। পরে এ সব অপমানের কথা সইতে না পেরে রাগে ও ক্ষোভে জেসমিন ঘরে গিয়ে বিষাক্ত দ্রব্য সেবন করে মাটিতে লুটে পড়েন।
পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
পরে ঢাকা নেয়ার পথে তার শারীরিক অবস্থা বেগতিক হলে তাকে উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়ে প্রায় ২ মাস আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবারের লোকজন।
প্রায় ২ মাস যাবৎ বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সকালে তিনি মারা যান। এ দিকে ঘটনাটি ঘটিয়ে প্রশাসনের চাপের মুখে পালিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায় ওই সন্ত্রাসী বিল্লাল।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার এসআই মো. সোহেল মোল্লা বলেন, জেসমিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে জেসমিনের মা নূরজাহান আক্তার বিল্লাল ফরাজীকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নামে থানায় গত ১৭/৯/১৯ একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
অভিযোগে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছর পূর্বে জেসমিন আক্তারের বিয়ে হয়। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এক বছরের মাথায় তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে জেসমিন তার এক মেয়ে সন্তান নুহা আক্তারকে নিয়ে তার বাপের বাড়ি বড়গাঁওয়ে থাকেন।
জেসমিনের মা নূরজাহান আক্তার বলেন, গত ১০ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে বড়গাঁও এলাকায় জনৈক কবির হোসেনের বাড়ির সামনে পাকা রাস্তায় জেসমিনকে একা পেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী। এতে সে রাজি না হওয়ায় বিল্লাল তাকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার হেকিম ফরাজীকে অবগত করলে বিল্লাল ক্ষিপ্ত হয়ে তার মোবাইলে ফোন করে অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা বলে এবং ভয়-ভীতি দেখায়।
স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হেকিম ফরাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিল্লাল ফরাজী খারাপ লোক। জেসমিন তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিল্লাল তাকে মারধর করে। পরে সে ওই পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখালে জেসমিন বিষপান করে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ওই নারী লিপ্সিত বিল্লাল ফরাজী মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি বিল্লালের পরিবারকে জানালে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে সে মারধর করে।
স্থানীয়ভাবে বিল্লাল ফরাজী প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। এ ছাড়া বড়গাঁও এলাকার আলোচিত যুবলীগকর্মী মামুন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী।