বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৯:১২ অপরাহ্ণ, ১১ নভেম্বর ২০১৯
জহির খান উজিরপুর :: ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র তান্ডবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা, জল্লা, শোলক, সাতলা, বড়াকোঠা, ওটরা, শিকারপুর ও গুঠিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত হেক্টর জমির ফসল ও মাছের ঘের।
রাস্তায় গাছপালা ও বিদ্যুৎ এর খুঁটি-তাঁর পড়ে উপজেলার সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সাথে গত শুক্রবার বিকেল থেকে গোটা উপজেলার কোথাও বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। গাছপালার সাথে পাল্লা দিয়ে গোটা উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে ওপরে পড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ এর প্রায় দেড় শতাধিক খুঁটি।
এছাড়া রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে ঝড়ের সময় নিজ ঘরের নিচে চাঁপা পড়ে নিহত ওই বৃদ্ধার নাম আশালতা মজুমদার (৬৫)। সে পৌর সদরের দক্ষিণ মাদার্শী গ্রামের মৃত দিজেন্দ্র নাথ মজুমদারের স্ত্রী ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তার ওই দিন বৃদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন, বিকেল ৩টার দিকে ঝড়ের সময় ওই বৃদ্ধার বসত ঘরের ওপর একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘূর্নিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গত শুক্রবার রাত থেকে একটানা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং মাঝে মধ্যে ভারী বর্ষণে পৌর সদরসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে নদ-নদী গুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে জোয়ারের পানি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত সন্ধ্যা নদী লাগোয়া আশোয়ার,রৈভদ্রাদি,বান্নাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য থাকা আশোয়ার সাইক্লোন শেল্টারটি গত মাসে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
যার কারনে তারা কোনো নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে হয়েছে। এরই মধ্যে শনিবার ভোর রাতে বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়া ঘূর্নিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ওইদিন সকাল থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত একটানা ঝড়ে এসব এলাকার কমপক্ষে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে গুঠিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পৌর সদরের রাখালতলা এলাকার সুমন হাওলাদার নামের এক যুবক সোমবার সকালে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নদীর জোয়ারের পানিতে পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে বি.এন.খান কলেজের প্রধান ফটকের সামনের পাঁকা রাস্তা, কালিরবাজার-উপজেলা চলাচলের একমাত্র রাস্তা, পৌর সদরের ৬নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়া, ৭নং ওয়ার্ডের হানুয়া বারপাইকা গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পৌর সদরের সবগুলো রাস্তায় গাছপালা ও বিদ্যুৎ এর খুঁটি পড়ে লন্ড-ভন্ড হয়ে রয়েছে। কয়েক হাজার পানের বরজ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হরেন রায় এই প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমার ইউনিয়নে। কারন এটি কৃষি প্রধান এলাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আবাদকৃত বিভিন্ন শীতকালীন সবজিসহ শত শত পানের বরজ বুলবুলের আঘাতে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, ইউনিয়নের পূর্ব হারতা, নাথারকান্দি, দক্ষিন নাথারকান্দি, কালবিলা, মধ্য হারতা, দক্ষিন হারতা, কুচিয়ারপাড়সহ প্রায় সবগুলো গ্রামের কমপক্ষে দেড় শতাধিক টিনের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তায় গাছপালা ও অর্ধশত বিদ্যুৎ এর খুঁটি উপড়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্নরুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে গ্রায় ৩০টি পোল্ট্রি মুরগীর খামার। ভেসে গেছে এসব এলাকার শতাধিক মাছের ঘের।
চেয়ারম্যান হরেন রায় আরও জানান, গত শুক্রবার বিকেল থেকে আমার ইউনিয়নের বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ছিলো। আজকে সোমবার মোবাইল নেটওয়ার্ক সামান্য পাওয়া গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগীতা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান হরেন বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে এখন (বিকেল সাড়ে ৪টা) পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের কোনো প্রকার ত্রান সামগ্রী দেয়া হয়নি। যার কারনে অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে ফোনটি কেটে দিয়েছেন।
উজিরপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।