বোরহানউদ্দিনে প্রভাবশালীদের নিষিদ্ধ জালে নিঃস্ব মেঘনার জেলে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বোরহানউদ্দিনের মেঘনা নদীতে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গায় নিষিদ্ধ জাল ফেলে মাছ ধরার অভিযোগ উঠছে জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
তাদের জাল ফেলার কারণে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে সাধারণ জেলেদের। এর পাশাপাশি এটিকে পরিবেশের জন্যও হুমকি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলেদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন গেছে, মেঘনা নদীর বোরহানউদ্দিন উপজেলার সীমান্তবর্তী হাসাননগর এলাকার রবুরচর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় চারটি অবৈধ খরছি জাল ও রবুরচরের প্রান্ত থেকে নাগর পাটোয়ারী চর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় চারটি পিটানিয়া জাল ফেলে নদীর বিশাল এলাকা দখলে রেখেছে। এতে স্থানীয় অন্য জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছে না।
জেলেদের অভিযোগ, এর সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচোরা ইউপি চেয়ারম্যাতন মো. নাজিম উদ্দিন বাবুল, মিশু হাওলাদার, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউপির আবু সায়েদ মাঝি, কালাম মাঝি, হাসাননগর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মো. মানিক হাওলাদার, ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির মাঝি প্রমুখ।
জেলেরা জানান, ওই সব জালে ছোট-বড় সব ধরনের মাছই ধরা পড়ে। এমনকি কীটপতঙ্গ পর্যন্ত রক্ষা পায় না ওই জাল থেকে। পরিবেশ অধিদপ্তর মনে করছে এতে চরম হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ ও নদী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলেরা জানান, প্রতিদিনই নদীতে জাল ফেলতে গিয়ে মেঘনার প্রবল স্রোতে তাদের জাল খরচি জালের খুঁটির সাথে জড়িয়ে যায়। এরপর ওই জাল আর খুলে আনা সম্ভব হয় না। এতে করে গত কয়েক মাসে লাখ লাখ টাকার জাল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন শত শত জেলে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রভাবশালীদের লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না তারা। জেলেদের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে হাত করেই এমন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জানতে চাইলে হাকিমুদ্দিন নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নদীতে খুঁটি পুঁতে রেখেছেন, তবে তারা কোনো জাল দেখতে পাননি ।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নদীর মাঝে পুঁতে রাখা খুঁটির চারপাশে জাল বাঁধা থাকে। জোয়ারে নদী টইটুম্বুর হলে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা জাল ওপরে তুলে বেঁধে দেওয়া হয়। ভাটায় পানি কমলে বেড়ার মধ্যখানে জাল টেনে রেণুসহ সব ধরনের মাছ নৌকায় তুলে নেয় অভিযুক্ত চক্রটি। অবৈধ জাল দিয়ে নদী দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসাননগরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মানিক হাওলার জানান, এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর মাঝির সাথে কথা বলেন।
মলংচোরা ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বাবুল সংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল হক বলেন, এ নিষিদ্ধ জালের সঙ্গে যত বড় প্রভাবশালী জড়িত থাকুক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না । মোল্লা এমদাদুল হক আরও জানান, খরছি ও পিটানিয়া জাল নদীতে ফেলা একেবারেই নিষিদ্ধ। খুব শিগগিরই প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
বিভাগের খবর, ভোলা