বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ০৫ জুন ২০১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: অবশেষে বরিশাল ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা হত্যাকান্ড নিয়ে মুুখ খুললেন মহানগর সভাপতি জসিম উদ্দিন। শনিবার ফেসবুকে এই হত্যাকান্ড নিয়ে একটি মন্তব্য পোস্ট করায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। সেই সাথে ফেসবুকের ওই মন্তব্যটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কর্ণধর খোদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকেও নিয়ে ওই মন্তব্যে বিষাদগার করা হয়েছে।
যে কারণে রেজা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক সিটি মেয়র আ’লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরন অনুসারি জসিম এখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার খোড়াক হয়ে দাড়িয়েছে। অবশ্য জসিমকে অভিযুক্ত করে রেজা হত্যাকান্ডে দায়ের করা মামলা নিয়ে এবারই প্রথম মুখ খুললেন তিনি। তবে আইনি জটিলতা এড়াতে তিনি বরিশালের বাইরে কোথাও আত্মগোপনে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জসিমের ওই পোস্টটিতে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজা হত্যাকান্ড নিয়ে যে সব তথ্য উপাত্ত্ব প্রকাশ করা হয়েছে তা দেখলে রীতিমত ‘থ’ খাওয়ার ন্যায়।’ সেখানে শুধু নেতা হাসানাত নন, প্রশ্ন তোলা হয়েছে ৯৬’র আ’লীগের শাসনামলে তার লালিত কতিপয় ক্যাডার বাহিনী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়েও। বিশেষ করে ওই শাসনামলে হাসানাতের নিয়ন্ত্রণে সৃষ্ট আ’লীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী ৬ খলিফার ভুমিকাও জসিম পোস্টটিতে তুলে ধরেছেন। সেখানে ক্লিন ইমেজের ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজার হত্যাকান্ডের বিষয়টি পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হত্যাকান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ পরিবারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এমন সময় বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিমের এহেন মন্তব্য ‘তপ্ত আগুনে ঘি’ ঢালার ন্যায়, যা তার অনুসারিদের উজ্জীবিত করেছে। যে কারণে উৎফুল্ল হয়ে জসিম অনুসারি অনেক নেতাকর্মী পোস্টটি শেয়ার করে সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে।
গত ২৭ মে বরিশাল পলিটেকটিক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রেজাউল করিম রেজা হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পরে এই মনে হয় গতকাল এই ছাত্রলীগ নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুললেন। মুলত ষড়যন্ত্রমূলক ওই হত্যা মামলায় তাকে নিজ ঘরনার প্রতিপক্ষ কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহ অনেকটা নাটকীয়ভাবে জড়িয়ে দেওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপরে বরিশালের রাজপথে তার আর দেখা মেলেনি। তবে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিনিয়ত তার অনুসারিরা মাঠ দখল রেখে নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে চলছে।
অপরদিকে, জসিমসহ মামলার অন্যান্য আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে হাসানাত পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারিরা। কিন্তু এই গ্রুপটিকে সাদিক আব্দুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যাকান্ড নিয়ে নিজের অবস্থান এখনও পরিস্কার করেননি।
যদ্দুর জানা গেছে, সাদিক আব্দুল্লাহ এই হত্যা মামলাটিকে ‘ট্রামকার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে বরিশালে তার অবস্থান সুদৃঢ় করার মিশন নিয়েছেন। কারণ যেকোন সময় বরিশাল মহানগরের কমিটি কেন্দ্র ঘোষণা করছে এমন ধারনা অনুমানে এনে।
যার দরুন তিনি এই মামলাটিকে নিয়ে একের পর এক নাটকীয় পর্ব চালিয়ে প্রতিপক্ষ হিরন অনুসারি রাজপথে থাকা ত্যাগি ছাত্রনেতা জসিম এবং সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ানসহ তাদের কর্মীদের দৌড়ের ওপর রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যে কারণে হত্যাকান্ডে জড়িতদের নিজের ছত্র-ছায়ায় রেখে বিরোধী শিবিরকে কোণঠাসা করতে দিয়েছেন মামলায় জড়িয়ে।
বিশেষ করে রেজা হত্যাকান্ডে প্রধান অভিযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেনকে তিনি মামলা থেকে সেইভ করে নেন নাটকীয়ভাবে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসনকে চাপের ওপর রেখে ওই মামলায় জড়িয়ে দেন হিরন অনুসারি জসিম উদ্দিনকে।
অবশ্য এ মামলায় সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ানকেও আসামি করার টার্গেট নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হিরন অনুসারিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আমির হোসেন আমু প্রতিরোধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ায় সেই মিশন আর সফল হয়নি। এখন প্রতিনিয়ত সাদিক অনুসারিরা একের পর এক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে জসিমসহ অন্যান্য আসামিদের ফাসির দাবিও জানাচ্ছে।
এমতাবস্থায় সাদিকের পিতা হাসানাতকে নিয়ে জসিমের দেওয়া ওই পোস্টটি ঢের আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জসিমের অভিব্যক্তি, রেজা হত্যাকান্ড একটি পরিকল্পিত ঘটনা (!)
কারণ হত্যাকান্ডের বেশ কয়েকদিন আগেও ছেলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জসিমকে আটকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন হাসানাত আব্দুল্লাহ। সেই সময় তিনি বরিশাল কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেনকেও অন্যত্র সরিয়ে দিতে সুপারিশ রেখেছিলেন। এর কিছু দিনের মাথায় কোতয়ালি থানা থেকে বরিশাল ডিবি পুলিশে সংযুক্ত করা হয় শাখাওয়াতকে, যার ১৫ দিনের মাথায় গত ২৭ মে পলিটেকনিক কলেজ ক্যাম্পাস সম্মুখ ঘটে ছাত্রলীগ নেতা রেজা হত্যাকান্ড।
জসিমের ধারনা এই হত্যাকান্ড মিশন হাসানাত আগেই জানতেন! তাতে যে আমাকে (জসিম) জড়ানোর পরিকল্পনা ছিল এটা প্রকাশ হয়ে গেছে। তাহলে কি ৯৬’র সেই শাসনামলের দিকে বরিশালকে ফিরিয়ে নিতে চাইছেন হাসানাত এমন প্রশ্ন জসিমের। সভাপতি জসিম পোস্টটিতে উল্লেখ করেছেন, ১৯৯৬ সালে আপনার (হাসানাত) মদতেই বরিশালে খলিফা সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের দ্বারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি এবং জমিদখল ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সেইসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রকাশ্যে অগচরে জন্ম দিয়েছিলেন মোনায়েম, পানামা ফারুক এবং ওমর। অবশ্য কুতুব রানা ও তার ভাই মান্না এবং মামা খোকনও ছিলেন সেই দলে। তাদের সন্ত্রাসের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে পুলিশের তৈরি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় তাদের ছবি থানার দেয়ালে ঝুলতে দেখা যায়।
জসিমের অভিযোগ, তখন সকলেই অস্ত্রের প্রদর্শন করত। এমনকি গাড়ির ছাদকেটে অস্ত্র প্রদর্শন করতো। শুধু তাই না, তারা অস্ত্র দিয়ে রাতে রাস্তার পাশের লাইটপোস্টে লাইটও সই করত! এমনকি জসিম তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন এসব সন্ত্রাসীদের নাম উচ্চারণ করে তখন মায়েরা শিশুদের ঘুম পরাতেন। উদাহরণস্বরূপ মায়ের বলতো, এই ভাবে বাবু ঘুমাও ঘুমাও ওই আসছে মামা খোকন ওই আসছে কুতুব রানা, মান্না আরও কত নাম।’