৯ িনিট আগের আপডেট রাত ১০:৪৭ ; শনিবার ; সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

ভারতের মুসলিমবিরোধী নতুন আইন ঘিরে বিতর্ক কেন?

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
৭:২৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একটি বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিলে প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে ভারতে যাওয়া অবৈধ অমুসলিম অভিবাসীদের ক্ষমা করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিতর্কিত বিলের এই ক্ষমার আওতায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম অভিবাসীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন।

হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার বলছে, বিলটি ধর্মীয় নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা লোকজনকে আশ্রয় দেবে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, মুসলিমদের প্রান্তিক করতে বিজেপির এজেন্ডার একটি অংশ এই বিল।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি (সিএবি) ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য একধরনের পরীক্ষা। দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেটি পাস করানো সহজ হবে। কিন্তু সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিলটি নিয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি। যেকোনো বিল দেশটিতে আইনে পরিণত হওয়ার জন্য সংসদের উভয় কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন।

এই বিলের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাজ্যগুলোতে ব্যাপক প্রতিবাদ উসকে দিয়েছে। কারণ সেখানকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, তারা সীমান্তের ওপার থেকে আসা অভিবাসীদের চাপে পিষ্ট হতে পারেন।

কি বলছে বিলটি?

বিলটি ভারতের ৬৪ বছরের পুরোনো নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনের প্রস্তাব। বর্তমানে এই আইনে বলা হয়েছে, কোনো অবৈধ অভিবাসী ভারতীয় নাগরিক হতে পারবেন না। আইনটিতে অবৈধ অভিবাসীদের বিদেশি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে; যারা কোনো ধরনের বৈধ পাসপোর্ট কিংবা ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই ভারতের প্রবেশ করেছেন অথবা অনুমোদিত সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও দেশটিতে অবস্থান করছেন। অবৈধ অভিবাসীদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত কিংবা স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

নতুন বিলে একটি অনুচ্ছেদের সংশোধনীর প্রস্তাব রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নাগরিকত্বের আবেদনের আগে একজন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ১১ বছর ভারতে বসবাস অথবা ফেডারেল সরকারের জন্য কাজ করতে হবে।

বিলে ছয়টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য ব্যতিক্রম নিয়ম রাখা হয়েছে। হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন। তাহলে স্বাভাবিক উপায়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য তাদের মাত্র ছয় বছর ভারতে বসবাসের কিংবা কাজের প্রমাণ দেখাতে হবে।

বিলটি নিয়ে বিতর্ক কেন?

এই বিলের বিরোধীরা বলেছেন, এটি বর্জনীয় একটি বিল এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। তারা বলছেন, ধর্মীয় বিশ্বাস কখনও নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত হতে পারে না। নাগরিকদের প্রতি ধর্মীয় বৈষম্য নিষিদ্ধ করেছে সংবিধান। এতে সবাইকে সমতা এবং সমান আইনি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।

দিল্লির আইনজীবী গৌতম ভাটিয়া বলেন, অভিবাসীদের মুসলিম এবং অমুসলিম হিসেবে বিভক্ত করার মাধ্যমে এই বিলে স্পষ্টভাবে আমাদের দীর্ঘদিনের, ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক নীতিগুলোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় বৈষম্য আরোপের চেষ্টা করা হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, এই বিলের উদ্দেশ্য যদি আসলেই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা হয়, তাহলে বিলটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করেন তিনি; এই সংখ্যালঘুরা নিজ নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়েছে। (রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে)।

তবে বিলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা রাম মাধব বলেন, বিশ্বের কোনো দেশই অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করে না। অন্য সবার জন্য যাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন রয়েছে। যারা বৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব চান তাদের জন্য স্বাভাবিক নাগরিকত্বের বিধান রয়েছে। এছাড়া সব অবৈধ (অভিবাসী) অনুপ্রবেশকারী।

বিলটির ইতিহাস কি বলছে?

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি প্রথমবারের মতো ভারতের পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাস হলেও রাজ্যসভায় আটকে যায়। তার আগে এ বিলের বিরোধিতায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তীব্র বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়।

এ বিক্ষোভ-প্রতিবাদের কেন্দ্র হয়ে ওঠে আসাম রাজ্য। গত আগস্টে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) বাস্তবায়ন করা হয়। এনআরসি বাস্তবায়নের ফলে রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। নাগরিকত্ব হারানো এসব মানুষের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষি এবং অবৈধ বাংলাদেশি বলে দাবি করছে দেশটির সরকার। এই রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীরা সেখানকার সরকারের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের কারণ। অনেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে এনআরসির মতোই মনে করছেন; যদিও বিষয়টি এক নয়।

এনআরসি হলো এমন একটি তালিকা যেখানে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে পর্যন্ত যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন এবং এ সংক্রান্ত প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। দেশটির গত নির্বাচনী ইশতেহারে এনআরসি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে বিজেপি।

কিন্তু আসামের চূড়ান্ত এনআরসির তালিকা প্রকাশের কয়েক দিন আগে বিজেপি বলে, নির্বাচনী ইশতেহারে এনআরসি বিষয়ে ভুল ছাপা হয়েছিল। বিজেপির হঠাৎ সুর বদলের পেছনে ছিল, আসামের বাঙালি হিন্দু ভোটার। বিজেপির জন্য বিশাল ভোটব্যাংক এই বাঙালি হিন্দু ভোটাররা; যারা চূড়ান্ত নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ পড়েন। তারাও অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হয়েছেন।

Other

আপনার ত লিখুন :

 
ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  নিখোঁজ হওয়া শিশুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল পুলিশ  সন্ধ্যা রাতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অস্ত্রের মহড়া, তিন কিশোরকে এলোপাতাড়ি কোপাল  দুই মাস সাতদিন পর দেশে এলো সৌদি প্রবাসী মুসার মরদেহ  বাকেরগঞ্জ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ  নির্বাচনে মার্কিনিদের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ  লালমোহনে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা  উজিরপুরে যুবলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫  সোনার দাম আরও কমল  দীর্ঘ ১০ বছর পর কলাপাড়ায় যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন  বোরহানউদ্দিনে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত