ভারীবর্ষণে বরিশাল নগরীর রাস্তা-ঘাট তলিয়েছে, বাসা-বাড়িতে হাটু পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বরিশাল নগরীর প্রায় সবগুলো সড়ক পানি নিচে তলিয়ে গেছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) দিবাগত ভোর রাত থেকে একটানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণে নগরের অধিকাংশ রাস্তাঘাটে হাঁটুপানি জমেছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ গয়ে গেছে। এমনকি বসতবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
রোববার রাত থেকেই বরিশালে বৈরী আবহাওয়া এবং থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোর থেকে মাঝারী এবং দুপুরের পর তাতে আরও গতি পেয়ে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এরসঙ্গে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, নগরের সদর রোড, বগুড়া রোড, গোরস্থান রোড, কালুশাহ সড়ক, বটতলা, বাংলাবাজার, কলেজ অ্যাভিনিউ, ফকিরবাড়ি সড়ক, কালীবাড়ি সড়ক, রাজাবাহাদুর সড়ক, মল্লিকবাড়ি সড়ক, ব্রাউন কম্পাউন্ড, আগরপুর রোড, পলিটেকনিক সড়ক, বাংলা বাজার, আমানতগঞ্জ, পলাশপুরসহ নগরের সবগুলো সড়কই পানিতে নিমজ্জিত।
এছাড়া রূপাতলী হাউজিং, দপদপিয়া, পলাশপুরসহ নগরের পশ্চিমাংশের বিশাল এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এসব এলাকায় ঘর থেকে বেরোনোই মুশকিল হয়ে পড়ছে।
বৃষ্টিপাতের কারণে নগরের বাসিন্দাদের মধ্য চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের অশেষ দুর্ভোগ হচ্ছে।
অটো চালক তমাল জানান, রাস্তা-ঘাট ফাঁকা থাকায় আজ তেমন আয় হয়নি। সকালে বৃষ্টির কারণে বাইরে নামতে পারেননি। কিন্তু ঘরে বাজার-সওদা নেই। তাই বাধ্য হয়ে দুপুরের পর অটো নিয়ে নেমেছেন। কিন্তু যাত্রী না থাকায় মাত্র ১০০ টাকা আয় করেছেন।
রিকশা চালক মোতালেব মিয়া বলেন, সারাদিন ভিজে ৪শ টাকা আয় করেছি কিন্তু ভিজে যে টাকা আয় করার কথা তা হয়নি। রাস্তায় মানুষ নেই বললেই চলে।
এদিকে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীতে উঁচু জোয়ার বইছে। সবগুলো নদীতেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জোয়ার পরিমাপক শাখা জানায়, সোমবার বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমটার, ভোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীতে ১৫ সেন্টিমিটার, দৌলতখান উপজেলার মেঘনা-সুরমা মোহনায় ৬০ সেন্টিমটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীতে ৫৮ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের সিনিয়র পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বেশিরভাগই হয়েছে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায়। প্রবল বর্ষণ এখনো অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এর প্রভাবে চর ও নিম্নাঞ্চলসমূহ স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শিরোনামবরিশালের খবর