ভালোবাসার বিয়ে ‘খাবারের অজুহাতে’ ভাঙলেন বর
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ভালোবেসে ২০১৯ সালে গোপনে বিয়ে হয়েছিল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ও মাহমুদা আনজুমান মিলির। ২৫ আগস্ট আয়োজন করা হয় বাগদান অনুষ্ঠানের। বরপক্ষকে আপ্যায়নের জন্য ১৪-১৫ আইটেমের বাহারি রকমের খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করেছিল কনেপক্ষ।
কিন্তু তাতেও মন ভরেনি বরের বাবার। অভিযোগ তুলেন খাবার নিয়ে। তাও আবার খাবার খাওয়ার পর। একপর্যায়ে খাবারের অজুহাত দেখিয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বরকে সঙ্গে করে নিয়ে যান তার বাবা-মা।ঘটনাটি কক্সবাজারের। ওই সময় কনে মিলি ভালবাসার মানুষ সাজ্জাদকে আটকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেও হয়েছেন ব্যর্থ।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন মিলি। এই মামলার করার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করেন মিলিসহ তার স্বজনরা। সাজ্জাদ হোসেন কক্সবাজার শহরের বৃহত্তর পাহাড়তলি সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ পাহাড়তলি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ সাওদাগরের ছেলে।
এ বিষয়ে বর সাজ্জাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে মিলিকে স্ত্রী বলে স্বীকার করেন। পরে অনুষ্ঠানে তার বাবা-মাকে যথাযথ সম্মান না করার কারণে তিনি এই সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছেন বলে জানান। তার দাবি, ইচ্ছের বিরুদ্ধে মিলি তাকে বিয়ে করেছেন।
মিলির এক প্রতিবেশি জানান, বরপক্ষের অতিথি আপ্যায়নে ১৪-১৫ আইটেমের বাহারি রকমের খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করেছিল কনেপক্ষ। মূলত বরের পিতা তার অসাধু উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য এই অজুহাত তুলেছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে মিলি বলেন, অনুষ্ঠানের খাবার হিসেবে তারা আমাদের কাছ থেকে কবুতর, হাঁস, গরু, দেশি মুরগী, ইলিশ, গলদা চিংড়ি ও খাসিসহ ১৪ রকমের বাহারি রকমের খাবার দাবি করেন। আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তেমন না হলেও তাদের চাহিদা মত আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সবাই খাবার খাওয়ার পর আমাদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে।
মিলি বলেন, দীর্ঘদিন প্রেমের পর সাজ্জাদের সঙ্গে আমার গোপনে বিয়ে হয়েছিল। সাজ্জাদ তার স্বামী। পরে সেই বিয়েকে সামাজিকভাবে রূপ দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুই পরিবার। কিন্তু ‘খাবারের’ অজুহাতে অনুষ্ঠানের মধ্যেই চলে যায় সাজ্জাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
মিলি আরো বলেন, ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পাওয়ার আশায় কাবিননামা ও যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে বর পক্ষের আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছি। পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো প্রকার সামাধান পাইনি। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। এতে আত্মহত্যা করা ছাড়া তার আর কোনো পথ খোলা নেই।
কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ বলেন, ছেলেমেয়ে দুই জনের মতের মিলনে বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। ওই বিয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুপ দেওয়ার জন্য কনে পক্ষ ১০০ জনের খাবারের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে আমিও অতিথি হিসেবে ছিলাম। কনে পক্ষ যথাযথ সম্মান করেছে। পাশাপাশি ভালো খাবারও দিয়েছে। কিন্তু ছেলের বাবা ইউসুফ সাওদাগর অহেতুক অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার রাতে সাজ্জাদের বাবা মো. ইউসুফ সওদাগর বলেন, খাবারের বিষয় নিয়ে কোনো কিছুই হয়নি। এটি মেয়ে পক্ষের সাজানো নাটক। তিনি আরো বলেন, সত্যিকারের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত এবং আমাদের মান-সম্মান নষ্ট করতে এসব মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।
দেশের খবর