২ িনিট আগের আপডেট বিকাল ৪:৫৪ ; রবিবার ; ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
EN Download App
Youtube google+ twitter facebook
×

ভাষা আন্দোলনে বরিশালের বীর সন্তানদের অবদান

বরিশালটাইমস রিপোর্ট
১১:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭

মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজধানীর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছিল, ঠিক তখনই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিলো বরিশালেও। কারণ রাষ্ট্রভাষার জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন বরিশালের সন্তান কাজী গোলাম মাহবুব। এ ছাড়াও ওই কমিটিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভোলার সন্তান শামসুল আলম, বরিশালের আবদুর রহমান চৌধুরী (বিচারপতি), আখতার উদ্দিন আহমেদ, এম ডব্লিউ লকিতুল্লাহ এবং অনিল দাস চৌধুরীসহ বৃহত্তর বরিশালের আরও অনেক ভাষাসৈনিক।

শুধু তাই নয়, একুশে ফেব্রুয়ারির সাংস্কৃতিক চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন বৃহত্তর বরিশালের কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিল্পীরা। ভাষা আন্দোলনের পর যেসব গান-কবিতা সারাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার অধিকাংশেরই প্রতিষ্ঠাতা হলেন এই বরিশালের সন্তান।’’

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, প্রথম সুরকার আবদুল লতিফ, পরবর্তী ও বর্তমান সুরকার আলতাফ মাহমুদ সবাই এই বরিশালের কৃতি সন্তান।

আবার আবদুল লতিফের ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়ৃ’ বিখ্যাত এই গান কিংবা কিংবদন্তির কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় ফুটে ওঠে মায়ের ভাষার প্রতি হৃদয়স্পর্শী আবেগ আর অনুভূতি।

বরিশালের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস’ গ্রন্থে। এছাড়াও জীবিত থাকাকালীন বরিশালের কয়েকজন ভাষাসৈনিকের স্মৃতিচারণ থেকেও বেরিয়ে এসেছিল অনেক না জানা কাহিনী।

কিন্তু গত কয়েক বছরের ব্যবধানে একে একে পরপারে চলে গেছেন বরিশালের সর্বজন পরিচিত ভাষাসৈনিক।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অধ্যয়ন করে জানা গেছে- ১৯৪৭ সালের শেষভাগে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কবীর পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার ওপর একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন। সভায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট অবনী ঘোষ, অ্যাডভোকেট মোবারক আলী, রফিকুল ইসলাম, বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ডিএন চ্যাটার্জি।

১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ওই বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রশীদ বিল্ডিংয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ফজলুল হক হলের ছাত্র ভোলার শামসুল আলমকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়।’’

সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছিলেন বরিশালের আবদুর রহমান চৌধুরী (বিচারপতি)। তিনি তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহ-সভাপতি ছিলেন। একই দিনে বরিশাল মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এক জনসভার আয়োজন করে মুসলিম ছাত্রলীগ। ছদরুদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য রাখেন- আখতারুদ্দিন আহমদ, এস ডব্লিউ লকিতুল্লাহ, অনিল দাস চৌধুরী।

সন্ধ্যায় এক শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। বি এম কলেজেও ওই দিন ছাত্রদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা হয়। অশ্বিনী কুমার হলে আর একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন হাশেম আলী। সভায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি করা হয়।

১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রদেশব্যাপী হরতাল পালিত হয় এবং সচিবালয় ঘেরাও করা হয়। পুলিশ শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বরিশালের কাজী গোলাম মাহবুব ও সরদার ফজলুল করিমকে (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) গ্রেফতার করে।’’

ঢাকার সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে ওই দিন বরিশালের স্কুল-কলেজেও ধর্মঘট পালিত হয়। বরিশাল মুসলিম ছাত্রলীগ এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। ছাত্র ফেডারেশন তাদের সমর্থন দেয়। ছাত্রলীগের কাজী বাহাউদ্দীন আহমেদ আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলনে বরিশালের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

১১ মার্চ হরতালের পর সভা করার জন্য কোথাও জায়গা পাওয়া যায়নি। তখন বরিশাল শহরে ফকির বাড়ি রাস্তার পাশে সদর রোড দীপালি (অভিরুচি) সিনেমা হলের সামনে এবং আর্য্যলক্ষ্মী সংলগ্ন কচুখেতে সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কাজী বাহাউদ্দীন আহমেদ এবং বক্তব্য রাখেন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শামসুল হক চৌধুরী (সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি), এবিএম আবদুল লতিফ (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) মোহাম্মদ আর্শেদ (ভোলা), মোখলেছুর রহমান, আশরাফ আলী খান ও হাসান ইমাম চৌধুরী প্রমুখ। জনসভার ছবি তোলেন ফখরুল ইসলাম খান।

ওই দিন সন্ধ্যার পর পুলিশ কাজী বাহাউদ্দীন আহমেদ, শামসুল হক চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, মোহাম্মদ আর্শেদ ও এ বিএম আশরাফ আলী খান এবং শেখ মালেককে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। এই গ্রেফতারের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা থানা ঘেরাও করে ফেলে। পরে বাধ্য হয়ে প্রশাসন বন্দিদের মুক্তি দেয়।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার এক জনসভায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে প্রতিবাদে বিভিন্ন দলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’। ২৮ সদস্য বিশিষ্ট এই কর্মপরিষদের পাঁচজন ছিলেন বৃহত্তর বরিশাল জেলার। প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষণার উত্তাপ বরিশালেও অনুভূত হয়।

কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বানে বরিশালে ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ পালনের প্রস্তুতি চলে। আওয়ামী মুসলিম লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘পতাকা দিবস’ পালন শুরু হয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এ নামে পতাকা ও ব্যাজ বিতরণ এবং পোস্টারিং চলতে থাকে। কর্মীরা টিনের চোঙা নিয়ে রাস্তায় প্রচারকাজ চালায়। এই চোঙা ফুকানোর অন্যতম নায়ক ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিখিল সেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি আবদুল মালেক খানকে সভাপতি এবং যুবলীগের সম্পাদক আবুল হাশেমকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘বরিশাল রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। বরিশাল যুবলীগের সভাপতি আলী আশরাফ ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের অবিসংবাদিত নেতা।

বরিশালে ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএম কলেজের ছাত্ররা ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তারা পৃথক ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। এর আহ্বায়ক ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি এবং বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া (গৌরনদী)। সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন ছাত্রলীগ সম্পাদক একেএম বেলায়েত হোসেন (শ্রমিক নেতা), সহ-সভাপতি মতিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ট্রেজারার রফিকুল ইসলাম (১৯৭১ সালে শহীদ), সিদ্দিকুর রহমান, মোহাম্মদ ইউসুফ কালু, কলেজ সংসদের সম্পাদক আবদুস সাত্তার, সমীর পাল, জসিম বিশ্বাস এবং সরদার গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ।

২১ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর বরিশালের সব বিদ্যালয় ও শহরে হরতাল পালিত হয়। মিছিল বরিশাল শহর প্রদক্ষিণ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার সংবাদ বরিশালে পৌঁছালে একজন পুলিশ সদস্য রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে তা জানান। ফলে পরিষদের উদ্যোগে রাত ৯টায় শহরে মিছিল বের হয়। ওই রাতেই সার্কিট হাউসের কাছে অবস্থিত বরিশাল মুসলিম ইনস্টিটিউটে সংগ্রাম পরিষদের সভা বসে এবং পরে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়।

সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২৫ থেকে ৮১ জনে উন্নীত করা হয়। ‘বরিশাল সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’র অন্তর্ভুক্ত যারা ছিলেন তাদের কয়েকজন হলেন- আবদুল মালেক খান (সভাপতি-তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের জেলা সভাপতি), আবুল হাশেম (সম্পাদক, যুবলীগ আহ্বায়ক), আলী আশরাফ (সভাপতি, যুবলীগ সদস্য), আবদুল আজিজ তালুকদার, অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত, প্রাণ কুমার সেন, জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর, আবদুল করিম, সিরাজুল হক ভূঁইয়া (নয়া মিয়া), উকিল ওবায়দুল হক, উকিল আমিনুল হক চৌধুরী (সম্পাদক, আওয়ামী মুসলিম লীগ), ডা: হাবিবুর রহমান, নিখিল সেন, ইমাদুল্লাহ (লালা ভাই), সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, মিসেস হামিদ উদ্দিন, মোশারেফ হোসেন মোচন, আলতাফ মাহমুদ (শহীদ), মোহাম্মদ হোসেন আলী, সরদার গোলাম কুদ্দুস, সৈয়দ আজিজুল হক শাহজাহান, সুনীল গুপ্ত, মোহাম্মদ ইউসুফ কালু, সাধন রায় চৌধুরী, সুলতান মিয়া, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, মুজিবুর রহমান কাঞ্চন (শহীদ), নসরুল্লাহ খসরু, আবদুস সাত্তার, বরুণ বর্মণ, হাজী আবদুল লতিফ খান প্রমুখ।

২১ ফেব্রুয়ারি সারারাতেই ছাত্রদের প্রচারকাজ চলে। ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি বরিশালে হরতাল ও মিছিল হয়। অন্যান্য জায়গার মতো বরিশালেও আন্দোলনকে সংগঠিত করার পেছনে চালিকাশক্তি ছিল ছাত্রসমাজ। ক্লাস বর্জন করে প্রায় ৫০০ ছাত্রের এক মিছিল বেরিয়ে পড়ে বরিশাল এ কে স্কুল থেকে। এর সংগঠক হিসেবে ছিলেন স্কুলের জেনারেল ক্যাপ্টেন এ কে এম আজহার উদ্দিন (বরিশাল শহরের দক্ষিণ আলেকান্দা ‘রুমীবাগের’ বাসিন্দা ছিলেন)। এ ছাড়া নবম শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন এ বারেক খলিফা, মীর আশ্রাফ উদ্দিন প্রমুখ আন্দোলন সংঘটনে ভূমিকা রাখেন। এ কে স্কুল ময়দানে ভাষা শহীদদের গায়েবানা নামাজে জানাজা পড়ান মৌলভী সুলতান আহমেদ। জানাজা শেষে ছাত্র-জনতা শহর প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে সমবেত হন। সেখানে এ কে এম আজহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা থেকে স্টিমারে আগত সৈয়দ শামসুল হুদা একটি টেলিগ্রাম সংবাদপত্র নিয়ে আসেন, যাতে ঢাকায় ছাত্র হত্যার সংবাদ ছিল। অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ভোর থেকে ছাত্র-জনতার স্রোত নামে। গ্রাম থেকে আসা জনতা ছাড়াও শহরের শত শত মহিলা মিসেস হামিদ উদ্দিনের (আওয়ামী লীগ এমপিএ) নেতৃত্বে প্রথম শোভাযাত্রা করেন। বরিশালের অন্যান্য মহিলা ভাষাসৈনিক হলেন হোসনে আরা নিরু, মঞ্জুশ্রী, মাহে নূর বেগম, রানী ভট্টাচার্য প্রমুখ।

মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন মেয়েরা, তার পরে সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। স্মরণকালের বৃহত্তম মৌন মিছিল অশ্বিনী কুমার হল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে সার্কিট হাউস ময়দানে গিয়ে শেষ হয়।

অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী খান বাহাদুর হাশেম আলী, অ্যাডভোকেট শামসের আলী প্রমুখ নগ্নপদে মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন অনেক মুসলিম লীগ নেতাকর্মী দল ত্যাগ করেন। সংগ্রামী জনতার এক জনসভা ওই দিন বিকেল ৩টায় অশ্বিনী কুমার হলে অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় এ কে স্কুল মাঠে শহীদ ছাত্রদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি অশ্বিনী কুমার হলের সামনে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন আবুল হাশেম, জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর, চক বাজারের সুলতান, মোশারেফ হোসেন নান্নু, আলী আশরাফ এবং মোশারেফ হোসেন মোচন প্রমুখ।

এদিন শহীদ মিনারে শোকের প্রতীক কালো পতাকা এবং সংগ্রামের প্রতীক লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর আগে মোহাম্মদ সুলতান তার দোকানের ১০ গজ সাদা কাপড় দিয়ে শহীদ মিনার মুড়ে দেন। পুষ্পস্তবক দিয়ে আবুল হাশেম শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।

অবশ্য ২৭ তারিখ রাতের অন্ধকারে সরকারি নির্দেশে পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। বরিশাল শহরের বাইরেও অনেক স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। তার মধ্যে বানারীপাড়া উল্লেখযোগ্য। এখানে যারা আন্দোলনকে সংগঠিত করেন তাদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীরা হলেন- আবদুস শহীদ, অতুল ভট্টাচার্য এবং কালীচাঁদ বসু প্রমুখ। বানারীপড়াায় ভাষার সংগ্রামে তাদের নেতৃত্বে উজ্জীবিত হন ছাত্ররা। বিশেষত জিন্নাহ স্কুল, কলিফা কোবা হাইস্কুল, চাখার কলেজ, নারায়ণপুর সরকারি হাইস্কুল, জাতীয় বিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা আন্দোলনে অংশ নেন। তাদের মিছিল বানারীপড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। পরে থানার সামনে দিয়েও যায় মিছিলটি।

তবে গ্রেফতারের হুমকির ফলে আবদুস শহীদ ও অতুল ভট্টাচার্য তখন মিছিলে ছিলেন না। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এই মিছিল প্রমাণ করে যে, ভাষা আন্দোলনের ঢেউ সেখানেও কতখানি লেগেছিল। পরে সংগঠকদের দৃঢ়প্রত্যয়ী ভাষণের পর মিছিলের পরিসমাপ্তি ঘটে।

ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনকারীদের কয়েকজন বৃহত্তর বরিশালের সন্তান। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি গঠিত ‘রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’-এ বৃহত্তর বরিশালে ৫ জন সদস্য ছিলেন।

তাঁরা হলেন কাজী গোলাম মাহবুব (আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিনিধি), শামসুল আলম (ভিপি, ফজলুল হক মুসলিম হল), শামসুল হক চৌধুরী (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছত্রলীগ), আখতার উদ্দিন আহমেদ, (নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ) ও মুহাম্মদ মুজিবুল হক (ভিপি, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল)। তাঁরা আন্দোলনের বিভিন্নপর্যায়ে নানাভাবে নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা কলেজ প্রভৃতি) অধ্যয়নরত বৃহত্তর বরিশালের ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বরিশালের গৌরব শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন এবং শহীদ মিনার নির্মাণ ও বাংলা ভাষাকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেন। বরিশালের সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া শিামন্ত্রী হিসেবে এসব গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

খবর বিজ্ঞপ্তি, টাইমস স্পেশাল, বরিশালের খবর, ভোলা

আপনার ত লিখুন :

 

ভারপ্রাপ্ত-সম্পাদকঃ শাকিব বিপ্লব
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮ | বরিশালটাইমস.কম
বরিশালটাইমস মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইসরাফিল ভিলা (তৃতীয় তলা), ফলপট্টি রোড, বরিশাল ৮২০০।
ফোন: +৮৮০২৪৭৮৮৩০৫৪৫, মোবাইল: ০১৮৭৬৮৩৪৭৫৪
ই-মেইল: barishaltimes@gmail.com, bslhasib@gmail.com
© কপিরাইট বরিশালটাইমস ২০১২-২০১৮
টপ
  বরিশাল-২ আসনে চলছে ভোটের আগে জোটের লড়াই  বানারীপাড়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়ার ইন্তেকাল  মঠবাড়িয়ায় পাঁচ সংগ্রামী নারী পেল শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা  বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ২ সাংবাদিক ‘গুলিবিদ্ধ’, আহত ৪০  পাকিস্তানে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে পুলিশ  সিলেটের ১০ নম্বর কূপে তেল ও গ্যাসের সন্ধান  সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফ্তার ৮  যারা পুলিশের কথা বলছে, তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে: ডিবিপ্রধান  বরগুনায় প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৪২ পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট অনিশ্চিত!  স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশে পাকিস্তানি নারী