বরিশাল: মহান মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শহীদ ছাত্র ও শিক্ষকদের স্মরনে স্মৃতি ফলকের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি এ স্মৃতিফলক নির্মানের। যার কারণে নিরব প্রতিবাদ শুরু করেছেন কলেজের ছাত্র হতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শিক্ষকরাও।
তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু’র ছত্রছায়ায় থাকতে এবং তাকে ধোয়াশা দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম স্মৃতি ফলকটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করালেও তার আদৌ কোন ফল পাচ্ছেন না কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকরা। এ নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা একাধিকবার কলেজ অধ্যক্ষকে তাগিদ দিলেও বিষয়টি নিয়ে টাল বাহানা শুরু করেছেন তিনি। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
তবে এরকম অভিযোগ পাত্তা না দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম বলেন, এতদিন দেরী হলেও জানুয়ারী মাসে এ স্মৃতি ফলকের কাজ শুরু হবে এবং মার্চের প্রথম দিকে কাজ শেষ হবে। আর ২৬ শে মার্চ এ স্মৃতি ফলকের উদ্বোধন করা হবে।
তবে তার বক্তেব্যর প্রেক্ষিতে কলেজ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, তার এই বক্তব্যও মিডিয়াকে সামাল দিতে। আদৌ এর কাজ এক বছরের মধ্যে শুরু হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আমরা। আর সন্দেহ থাকবেই না কেন, বর্তমান অধ্যক্ষর কাজের কারণেই আমাদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
কলেজ ছাত্র কর্ম পরিষদের এক নেতা জানান, আমু ভাইকে দিয়ে উনি স্মৃতিফলক উন্মোচন করিয়ে নিজে আমু ভাইয়ের লোক সাজার সৃষ্টি করছেন। কিন্তু এ বিষয়টি অবশ্যই আমু ভাই অবগত নন। অবগত থাকলে উনি আর কলেজের এই গুরুত্বপূর্ন পদে আসীন হতে পারতেন না।
কলেজের বামপন্থী সংগঠনের এক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, এর আগে আমরা ভাস্কর্য আন্দোলন করেছিলাম। সেসময় লোক দেখানো পৃষ্ঠপোষকতার সৃষ্টি করেছিলেন সেসময়ের শিক্ষক ইমানুল হাকিম স্যার। কিন্তু আমরা আশাবাদী ছিলাম তিনি অধ্যক্ষ হওয়ার পর ঐতিহ্যবাহী এ কলেজে ভাস্কর্য নির্মান করা হবে। কিন্তু ভাস্কর্য তো দূরের কথা আমাদের সেসময়ের আন্দোলনই তো বৃথা হয়ে গেছে। আশ্বাস আশ্বাস আর আশ্বাসে আমরা যখণ আশার আলো দেখতে অপেক্ষমান তখন স্যারের এসব কর্মকান্ড আমাদের আশার মুখে অমাবস্যার চাঁদ এনে দিয়েছেন তিনি।
কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের এক সাবেক নেতা বলেছেন, আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম স্যারকে অনেকে জামায়াত নেতা বা কোন এক বিএনপি নেতার প্রেস সচিব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, কিন্তু আমি এক কথায় বলব তার উপর এসব অভিযোগ সবই ঘুচে যাবে যদি তিনি আমাদের শত আকাঙ্খিত কলেজের শহীদ ছাত্র ও শিক্ষকদের স্মরনে স্মৃতি ফলক নির্মান, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মান এবং কলেজ প্রতিষ্ঠাতা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মৃতি রক্ষার জন্য তার ম্যুরাল স্থাপন করতে পারেন, তাহলে তার উপরের এসব অভিযোগ কিছুটা হলেও হালকা হবে।
কারণ হিসেবে এই সাবেক নেতা বলেন, ইতিমধ্যে কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে জানতে পারি, তারা কলেজে পরলেও তারা জানেনা কলেজ প্রতিষ্ঠাতা কে? চেনেনা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তকে, জানেনা তার ইতিহাস। তাই আমার দাবী ব্রজমোহন কলেজের ইতিহাস এবং তার প্রতিষ্ঠাতার ইতিহাসও যেন তুলে ধরা হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে। আশ্চর্যজনক বিষয় এ বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথা ঘামানোরই সময় পায়না। মনে হয় তিনি ভুলেই গেছেন স্মৃতি ফলক নির্মানের কাজ।
বিএম কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম স্যারের এসব কাজে পিছিয়ে যাবার কোন নির্দিষ্ট কারণ দেখতে পাচ্ছিনা। তবে তার কাজ সব আই ওয়াশ বলে অভিহিত করেন এই নেতা। তিনি আরো বলেন, তিনি কলেজে পরিবেশ রক্ষার নামে গাছ কাটবেন, আরো অনেক কিছু করারও সময় পাবেন। তবে, কলেজের ঐতিহ্য ধরে রাখার কাজ করার সময় তার হয়না।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে নিরব ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সর্ব মহলে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ঘই আন্দোলনেও যেতে পারে কলেজের ছাত্র সংগঠনগুলো।
এতে আরেক ধরনের বিপাকে পরতে চলছেন কলেজ অধ্যক্ষ বলে মনে করছেন অনেকে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম বলেন, ভাস্কর্য নির্মান সময়ের ব্যাপার, এছাড়া সারা বরিশালের কোথাও কোন ভাস্কর্য নেই। তবে স্মৃতি ফলক নির্মানের কাজ শুরু হবে জানুয়ারীতেই।
বরিশালের খবর