ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু: তদন্তে গিয়ে কর্মকর্তাদের ভূরিভোজ নিয়ে তোলপাড়
মো. জসীম উদ্দিন, বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফলে বিতর্কিত সেই সেবা ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় আখিনুর বেগম নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে এসে ভূরিভোজ করেছেন তদন্ত টিম। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আখিনুরের স্বজনরাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মে উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাহাদুর বয়াতির স্ত্রী আখিনুরকে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হন। এরপর দালালের প্ররোচণায় সেবা ক্লিনিকে নিয়ে সিজার অপারেশনের পর একটি কন্যা সন্তানের জম্ম দেন আখিনুর। সিজার অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় আখিনুরের মৃত্যু হয়। উন্নত চিকিৎসার কথা বলে আখিনুরের লাশ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। বরিশাল নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক অনেক আগেই আখিনুরের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনদের জানায়। এরপর আখিনুরের স্বজনরা সেবা ক্লিনিকের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এর আগেই ক্লিনিক কতৃপক্ষ গা ঢাকা দেয়।
১৬ মে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি বায়েজিদুর রহমান ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে সীলগালা করে দেন। এরপর স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আখিনুরের বাবার সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এরআগেও একই ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় একাধিক প্রসূতির মৃত্যু হয়। আখিনুর বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এসএম কবির হাসান মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ছেনমংকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই তদন্ত টিম বাউফলে আসেন। দুপুরে তদন্ত টিমের জন্য দেশী মুরগি, নদীর বোয়াল, কাছকির গুড়া, বড় সাইজের রুই মাছ ও মিক্সড সবজি দিয়ে ভূড়িভোজের আয়োজন করা হয়। ক্লিনিক কতৃপক্ষ এসব আয়োজন করে তদন্ত টিমকে আপ্যায়িত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রউফ বলেন, বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তদন্ত টিমকে দুপুরে আপ্যায়িত করা হয়েছে। একজন কলিগ আসলে এতটুকু করতেই পারেন, এটা অপরাধ নয়।
এ ব্যাপারে জানার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহাকে সাংবাদিকরা একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে আখিনুরের শ্বশুড় ফরহাদ হোসেন বয়াতি বলেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছে। এই টাকা আখিনুরের নবজাতকের নামে ব্যাংকে ফিক্সড করার কথা বললেও আমার কথা কেউ শুনছেন না। প্রয়োজনে আমি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেব।’
পটুয়াখালি, বিভাগের খবর