বরিশাল টাইমস রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৯:০১ অপরাহ্ণ, ২৩ আগস্ট ২০১৬
ভোলার লালমোহনে মো. ইউনুছ নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানিয়ে তা ব্যবহার করে ছেলে-মেয়েকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের মো. ইউনুছের ছেলে আরিফুর রহমান চলতি বছরের ২০ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে যোগদান করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনি এ চাকরি নিয়ে বর্তমানে চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
শুধু তাই নয়, এর আগেও এই সনদের মাধ্যমে ২০১৪ সালে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ নিয়ে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে চাকরিতে যোগ দেয় ইউনুছের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস। বর্তমানে তিনি লালমোহন উপজেলার কুলচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন।
ভুয়া সনদের মাধ্যমে এক এক করে ইউনুছ পরিবারের সন্তানদের চাকরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানান প্রশ্ন।
লালমোহন উপজেলা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে ইউনুছের নাম দেখা যায়নি। মুক্তিবার্তা ও গেজেট তালিকায়ও তার নাম নেই। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার সাহাবুদ্দিন ভূইয়া নামে এক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, দেশে চাকরির বাজারে যে সংকট এর মধ্যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাই চাকরি পেতে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে, আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা অসৎ উপায় অবলম্বন করে এক এক করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করছে।
তিনি আরো বলেন, ইউনুছ নামে লালমোহন উপজেলায় কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। সে যদি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলার সমাজসেবা অফিসার মো. ইউছুফ আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় যাদের নাম আছে তারা বিভিন্ন সময়ে ভাতাসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু ইউনুছ নামে এমন কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম লালমোহন সমাজসেবা অফিসের কোনো তালিকায় নেই। এমনকি এ নামে কোনো ভাতাও তাকে দেওয়া হয় না।
রোববার দুপুরে এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারী মো. ইউনুছের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, আমার আগে সনদ এসেছে। এখন গেজেট বা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে গেজেট বা তালিকায় নাম উঠবে।
গেজেট বা তালিকায় নাম না থাকলেও সনদ পেলো কোথায় এমন প্রশ্নে তিনি বিচলিত হয়ে অনেকটা চুপসে যান। এ সময় মুক্তিযোদ্ধার সনদটি দেখতে চাইলে তা তিনি দেখাননি।
ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার দোস্ত মাহামুদ বলেন, ইউনুছ নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম মুক্তিবার্তা ও মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট তালিকার কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চাকরির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল দুপুরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, কোনো সনদের গায়ে ভুয়া লেখা থাকে না। তবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া এমন কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে এটি যাচাই বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এমনকি ভুয়া প্রমাণ হলে চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সোমবার সকালে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ইউনুছের ভুয়া সনদে সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নিয়োগ পরিক্ষায় ছেলে আরিফুর রহমান ও বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সনদ যাচাই বাছায়ের জন্য ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ভুয়া প্রমাণ হলে অবশ্যই নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।