বরগুনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরগুনার আমতলী উপজেলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাড. মিজানুর রহমান সিকদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বরগুনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় আমতলীর একজন সরকারি চাকরিজীবীর নাম রয়েছে।
”
অ্যাড. মিজানুর রহমান সিকদার তাঁর অভিযোগে বলেন, “আমতলী পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মাসুদা কাদের একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমতলী উপজেলার ঘটখালী গ্রামের কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা হিসেবে বেতন ভাতাসহ সকল সরকারি যুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। একইসঙ্গে আমতলী পৌরসভার একজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে চলমান জেলা পরিষদ নির্বানের ভোটার তালিকায়ও তার নাম রয়েছে। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তিনি ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। তবু তিনি বিধি বহির্ভুতভাবে ভোটার হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাড. মিজানুর রহমান আরো বলেন, “তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনিরুল ইসলাম খান আমতলীর চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান বাদলের আপন বড় ভাই। তাই বড় ভাইয়ের পক্ষে চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান বাদল ও তার রাজনৈতিক সহকর্মী আমতলীর পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান এবং আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা যৌথভাবে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভার নাম করে ভোটারদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন। মনিরুল ইসলাম খানের জনপ্রিয়তা না থাকলেও অবৈধভাবে তাঁকে জয়ী করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তাঁরা। ” তাঁদের অবৈধ প্রভাবে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলেও জানান সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাড. মিজানুর রহমান সিকদার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলীর আঠারোগাছিয়া রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে তথ্য গোপন করে আমতলী পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন মাসুদা তারেক (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ০৪০৪৬৫৩৬৫৮৫৭)। পরে ওই বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হলে সেখান থেকে তিনি বদলি হয়ে আমতলীর ঘটখালী গ্রামের কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেই থেকে তিনি বেতন ভাতাসহ সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। একইসঙ্গে আমতলী পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাড. মিজানুর রহমান আরো জানান, বিভিন্ন সময়ে মাসুদা কাদেরের এ অনিয়ম নিয়ে কথা উঠলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান। এ বিষয়ে আমতলী পৌরসভার মেয়র মো. মতিয়ার রহমান জানান, সরকারি চাকরির বিধি মেনে এতদিনেও কেন তাঁর পদ শূন্য ঘোষণা করা হলো না- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি বলেন, “সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে মাসুদা কাদের সালিস মীমাংসার কাজ করেন কিন্তু পৌরসভা থেকে কোনো প্রকার বেতন ভাতা নেন না। ”
এ বিষয়ে মাসুদা কাদেরের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, আমি শিক্ষকতা করি এটাই জানি। শিক্ষা অফিস থেকে আমাকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ” রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে তথ্য গোপন করে কেন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং চাকরি সরকারিকরণ হওয়ার পরও কেন আপনার পদ শূন্য ঘোষণা করা হলো না- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে মাসুদা কাদের বলেন, “কাউন্সিলর হিসেবে রিজাইন দিয়েছি তা গ্রহণ হয়েছে কি হয়নি- তাও জানি না। ”
বরগুনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলম বলেন, “নিয়মানুযায়ী যাঁরা জনপ্রতিনিধি ছিলেন তাঁদের নামই ভোটার তালিকায় উঠেছে। এরপর বিষয়টি গোপন থাকায় এবং কেউ কোনো অভিযোগ না করায় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় তার নাম রয়ে যায়। ” এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি। জেলা পরিষদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যেকোন মূল্যেই আগামী ২৮ ডিসেম্বর একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সম্ভব সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। “
টাইমস স্পেশাল, বরগুনা