ভোলার চরফ্যাশনে ১০ টাকার চালের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত অনেকের। সরেজমিনে চরফ্যাশনে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। অনেকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতাসহ কোনো ভাতাই পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
চরফ্যাশনের ভিক্ষুকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক ভিক্ষুক শুধু ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সরকারের দেওয়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু এমনকি সরকারের ১০ টাকা মূল্যের চালের তালিকায় অনেকের নাম ওঠেনি। তারা বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তারা মুখ দেখে তাদের আত্মীয় স্বজনসহ ধনীদের কার্ড দেয়, আমাদের দেয়না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিধবা ভিক্ষুক বলেন, ‘আই আঙ্গো (আমাদের) লেম্বারকে (মেম্বার) আমা নাম দিতে কইলে লেম্বার আর কাছে ৩ হাজার টিয়া চায়। আই ৩ হাজার টিয়াও দিতে হারিনা আর নামও আয়না। হেয়তো আঙ্গোর চেয়ে বড় ভিক্ষুক।’
চরফ্যাশন পৌর শহরে ভিক্ষা করতে আসা আছুরা জানান, তার বাড়ি আসলামাপুর ৪নং ওয়ার্ডে। আর স্বামী পঙ্গু। তিনি বলেন, ‘হের পরেও আই ১০ টাকা ধরের চাইল খাইতাম পাইনা। লেম্বরেরা আর কাগজ হত্র কিছুই নেয়না। ভালা ভালা মাইনসেতে হুনসী ১০ টিয়া সরকার চাইল বেইচবো। আই খুশি হয়ছি ১ মন চাইল কিনুম। এহন আর নাম নেয়না।’
এ ব্যাপারে ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আ. হাই বলেন, ‘ভিক্ষুকেরা ভিক্ষা করাই তাদের অভ্যাস। তাদেরকে দিলেও তারা বলে পাইনা, খাইনা। আমার ওয়ার্ডে অনেক লোক, তো কোন ভিক্ষুক পায়নি এটা আমার জানা নেই।’
নীল কমল ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বিধবা ভিক্ষুক আমেনা বলেন, ‘আরও কাগজপত্র কিছুই নেয়নি। যদি ১০ টিয়া দিয়ে চাইল হাইতাম তাহলে তো ভ্যালেই হইত।’
শুক্রবার সকাল ১০ টায় কলমী আনজুর হাটে ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণের সময় বিধবা ভিক্ষুক হনুফা, বিউটি বেগম ও করুণা বেগম এসে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্যার আঙ্গোরেদে কার্ডও দেয়নি, চাইলও দেয়না। স্যার আমনে আঙ্গোগোরে চাইল লইয়া দেন।’
এ প্রসঙ্গে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তালিকার বিষয়টি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা তাদের মন মতো করছেন। তারা আমার কাছে এসে শুধু স্বাক্ষর নেয়। কোনো দরিদ্র যদি বাদ পড়ে থাকে তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তীতে কোনো সুযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা করব।’