ভোলায় আড়াই মাস ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন দুই চর, জনজীবনে ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সাবমেরিন ক্যাবল ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে অন্ধকারে রয়েছে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের বাসিন্দারা। ফলে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সেখানকার জনজীবন। এদিকে, ভোলার মেঘনা নদীতে ওই সাবমেরিন ক্যাবল ক্রটির আড়াই মাসেও মেরামত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকার ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল লাইন টেনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয় ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ও সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরে।
এর ফলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় বিচ্ছিন্ন ওই দুটি চর। এতে বদলে যায় চরবাসীর জীবনযাত্রাও। কিন্তু বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার মাত্র সাত মাসের মধ্যেই গত ২৩ জুন সাবমেরিন ক্যাবলের ক্রুটি দেখা দেয়। এতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ওই দুই চরের বাসিন্দারা। তবে ক্যাবলের ত্রুটি দেখা দেওয়ার আড়াই মাসেও সমাধান হয়নি বিদ্যুতের সমস্যা।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ইউনুছ বলেন, আমাদের চরে বিদ্যুৎ আসার পরে শহরের মতো হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ না থাকায় এখন ফের আগের মতো চর হয়ে গেছে। চরে রোদের কারণে প্রচণ্ড গরম। তেমন গাছপালা না থাকায় আমরা বিপাকে আছি। একই এলাকার বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের বিদ্যুৎ আসার পর টাকা খরচ করে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছি।
ফ্যান, লাইট ও ফ্রিজ কিনেছি। কিন্তু এখন আড়াই মাস ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের ঘরের ফ্যান, লাইট ও ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো যদি পুরো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমরা তো অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়বো। আমাদের ক্ষতি তো কেউ পূরণ করবে না।সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ আসার পর আমাদের সন্তানরা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতো।
এছাড়া ফ্যানের বাতাসে বিকেল ও রাতে ঘুমাতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে তো সন্তানরা কুপির আলোতে পড়াশোনা করতে চায় না। এমনকী প্রচণ্ড গরমের কারণে বিকেলে ঘরে ঘুমাতে পারে না।
একই এলাকার রুমা বেগম বলেন, ঘরে ছোট ছোট শিশু নিয়ে অনেক কষ্টে রয়েছি। গরমের কারণে শিশুরা ঘরে ঘুমাতে চায় না। ঘর থেকে বাইরে খোলা আকাশের নিচে নিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে ঘুম পাড়াতে হয়। আর রাতে সারারাত জেগে শিশুদের বাতাস করতে হয়। আমরা অনেক কষ্টে আছি। স্কুলশিক্ষার্থী জান্নাত বেগম বলে, সামনে আমাদের পরীক্ষা, সন্ধ্যার পরে আমরা কুপি জ্বালিয়ে পড়তে বসলে মাথা ব্যথা করে।
বেশি সময় পড়তে বসতে পারি না। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আজিজ বলেন, বিদ্যুৎ আসার পরে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছিল। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা দোকানপাট খোলা রেখে বেচাবিক্রি করেছি।
কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমরা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। আমাদের দোকানের ফ্রিজ ও টিভি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা দ্রুত সমস্যা সমাধানে সরকার ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে জোর অনুরোধ করছি। ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকার মেঘনা নদীতে অতিরিক্ত জাহাজ নোঙর করে রাখার জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের ত্রুটি দেখা দেয়।
ক্যাবল মেরামতের জন্য তিনটি ডুবুরি দল নামলেও নদী উত্তাল ও গভীরতার জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তা এসে পরিদর্শন করেছেন। তাদের সিদ্ধান্ত মতে আমরা পরবর্তী কাজ শুরু করবো। আশা করি, দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে। ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় আট শতাধিক গ্রাহক রয়েছেন।
বিভাগের খবর, ভোলা